মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাক্ষী দাউদকান্দি
প্লাবন ভূমিখ্যাত কুমিল্লার দাউদকান্দিতে একাত্তরে একাধিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ঢাকা-চট্টগ্রামের মহাসড়কের পাশ ঘেঁষা এ অঞ্চলেও ছড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি। সেসব স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো দেখতেই লোকজন ভিড় করে প্রতিদিনই।
দাউদকান্দি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবদুল কুদ্দুস বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্প ও নির্যাতন কেন্দ্র ছিল দাউদকান্দি আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় এবং দাউদকান্দি ডাকবাংলোতে। এ ক্যাম্প ও নির্যাতন কেন্দ্র ধ্বংস করতে আমরা ৯ ডিসেম্বর সকাল থেকে ক্যাম্পের তিনপাশ ঘিরে ফেলি, কারণ, অন্য পাশে মেঘনা-গোমতী নদী। তারপর শুরু হয় আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ। তখন পাকিস্তানি সেনারা প্রাণে বাঁচতে চারটি লঞ্চে করে নদী দিয়ে পালিয়ে যায়। এভাবে ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যার আগে শক্রমুক্ত হয় দাউদকান্দি।
এ যুদ্ধে যোগ দেন দাউদকান্দির দক্ষিণ এলাকার নজরুল ইসলাম কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধা, উত্তর এলাকার কাউসার কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধা, উত্তর-পূর্ব এলাকার আবদুল মতিন কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এলাকার শফিক কমান্ডারের মুক্তিযোদ্ধার দল। আমি ছিলাম নজরুল কোম্পানির দলে। এ কোম্পানিতে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ৯০ থেকে ১০০ জন। অন্য দলগুলোতেও প্রায় এমন সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। নজরুল ইসলাম কোম্পানির এলাকা ছিল গোয়ালমারী, কাউসার কোম্পানির এলাকা ছিল দাউদকান্দি উত্তর, আবদুল মতিনের এলাকা ছিল গৌরীপুর এবং শফিক কমান্ডারের এলাকা ছিল বড়কোটা।
আবদুল কুদ্দুস সরকার জানান, দাউদকান্দি মুক্ত হওয়ার আগে ২০ নভেম্বর গোয়ালমারীতে একটি যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধেও তিনিসহ অংশ নেন ওয়াদুদ, শফিক, নজরুল কোম্পানির মুক্তিযোদ্ধারা। তার কথা শুনে আমরা গ্রামের মেঠোপথ ধরে আসি গোয়ালমারী বাজারে।
গোয়ালমারীর এ যুদ্ধে অংশ নেন দাউদকান্দি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বর্তমান কমান্ডার মো. খোরশেদ আলম। তিনি বাসসকে বলেন, ইনসান পাগলি নামে ২৪ বা ২৫ বছর বয়সী এক নারী গোয়ালমারী বাজারে ঘুরে বেড়াতেন। তিনি কিভাবে যেন আগাম খবর পেলেন পাকিস্তানি সেনারা গোয়ালমারীতে আসছে। তখন তিনি চিৎকার করে ঘুরে ঘুরে পাকিস্তানিদের আসার খবর পুরো এলাকায় জানিয়ে দেন। তার এ চিৎকার শুনেই আমরা নিরাপদে অবস্থান নিই।
সেদিন ইনসান পাগলি যদি চিৎকার করে পাকিস্তানিদের আসার খবর না দিতেন তাহলে হয়তো আমরা সব মুক্তিযোদ্ধাই মারা যেতাম পাকিস্তানিদের হাতে। তবে পাকিস্তানিরা আমাদের না মারতে পারলেও ইনসান পাগলিকে গুলি করে মেরেছে। তার লাশ পড়ে ছিল গোয়ালমারী বাজারের পাশে। পরে তাকে সেখানেই কবর দেন স্থানীয়রা। (বাসস)