সাভারের আশুলিয়ায় ব্যবসায়ী ও পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ঠিকাদার কাজিমুদ্দিনকে (৫০) গলা কেটে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ ঘটনায় হত্যাকারী আব্দুল লতিফ খানকে (৩২) আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তার লতিফ ভিকটিমের বড় ভাইয়ের ছেলে। পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে তাদের মধ্যে মাঝেমধ্যে কথা-কাটাকাটি হতো। গত ৬ ফেব্রুয়ারি পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে লফিত তারা চাচাকে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলে এ বিষয়ে তদন্ত নামে র্যাব। তদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) আশুলিয়া থেকে লতিফকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারি সকাল আনুমানিক ১০টায় ঢাকার আশুলিয়ার ডেন্ডাবর এলাকায় লিপি ডেইরি ফার্মের বিশ্রাম রুম থেকে ফার্মটির স্বত্বাধিকারী কাজিমুদ্দিনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ভিকটিমের আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় কিছু ব্যক্তি হত্যাকাণ্ডটিকে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা বলে ধারণা করে। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এটি একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে খবর প্রকাশিত হয়। ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ডে ভিকটিমের স্ত্রী বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
তিনি বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকারী মোহাম্মদ আবদুল লতিফকে গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করা হয় ভিকটিমের ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আবদুল লতিফ জানায়, লতিফ ভিকটিমের বড় ভাইয়ের ছেলে। লতিফের বাবা মৃত্যুবরণ করার পর থেকেই সে তার চাচাদের সঙ্গে বসবাস করত। লতিফের পৈত্রিক সম্পত্তির অংশীদারিত্ব নিয়ে ভিকটিম কাজিমুদ্দিনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এ বিষয়ে প্রায় সময় তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হতো বলে জানা যায়। গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ভিকটিম কাজিমুদ্দিন নিজস্ব মালিকানাধীন ডেইরি ফার্মে তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে দেখতে আসে। ডেইরি ফার্মটি ভিকটিমের বাসার পাশে হওয়ায় ভিকটিম তার স্ত্রী ও সন্তানকে বাসায় পাঠিয়ে দেয় এবং ডেইরি ফার্মের বিশ্রাম রুমে রাতে থাকার জন্য অবস্থান করে। পরে সেদিন রাতেই লতিফ ভিকটিমের ডেইরি ফার্মে এসে তার পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে কথা বললে ভিকটিমের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়।
একপর্যায়ে লতিফ রুমে থাকা বটি নিয়ে ভিকটিমের গলায় কোপ দিয়ে হত্যা করে। লতিফ হত্যার ঘটনাটি যেন কেউ বুঝতে না পারে সেই জন্য ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নিয়ে রুমের দরজা তালা দিয়ে এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বটি পাশের রুমে রেখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, পরে ৭ ফেব্রুয়ারি সকালে ভিকটিমের স্ত্রী ফার্মে গিয়ে বিশ্রাম রুমের দরজা তালা দেওয়া দেখে ধারণা করে যে, তার স্বামী বাহিরে গেছে। বিশ্রাম রুমের একটি চাবি ভিকটিমের কাছে এবং অপর একটি চাবি তার স্ত্রীর কাছে থাকত। এরপর ফার্মের কাজের লোক গরুর ওষুধ নেওয়ার জন্য রুমের চাবি নিয়ে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলে ভিকটিমের গলাকাটা নিথর দেহ ঘরের বিছানার ওপরে দেখতে পায়।
হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে লতিফ গ্রেপ্তার এড়াতে সাভারের আশুলিয়া এলাকায় আত্মগোপন করে। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।গ্রেপ্তারের বিষয় আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।