বাইরে বের হচ্ছেন? মেনে চলতে হবে যেসব স্বাস্থ্যবিধি

১০৭

আনতারা রাইসা : কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে মহাবিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় চৌদ্দ হাজার  মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ২১৪ জনের। আশ্চর্য ক্ষমতাধর এই ভাইরাসের হাত থেকে কিভাবে নিজেকে  রক্ষা করা যায় সেটা নিয়ে চিন্তিত সবাই।

এখনও আবিষ্কৃত হয়নি কোনো কার্যকরী ভ্যাকসিন বা টিকা।

এই ভাইরাস ঠেকাতে অনেক দেশে স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হচ্ছে। তবে এর পরও দৈনন্দিন নানা প্রয়োজনে আমাদের বাইরে বেরুতে হয়, নানা মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়, হাটে-বাজারে যেতে হয়। ফলে করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি থেকেই যায়। এমন প্রেক্ষপটে  নিজের এবং অন্যের কাছে থেকে আপনার সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে এখনই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে হলে কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো নিয়মিত সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া।

কারণ সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া হলে তা হাতে থাকা জীবাণুকে মেরে ফেলে। একই কারণে সাবান-পানি না থাকলে অ্যালকোহল সমৃদ্ধ হ্যান্ড রাব বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে বলা হয়।

বেশিরভাগ আধুনিক বিল্ডিংয়ে প্রবেশে দরজা খোলার জন্য অ্যাক্সেসিবিলিটি বোতাম রয়েছে। আপনি এটিকে সহজেই আপনার বাহু, নিতম্ব বা পা দিয়ে স্পর্শ করতে পারেন। বাড়ির জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় সাবান বিতরণকারী যন্ত্র কিনে ফেলুন। তাহলে আপনার আশপাশের জীবাণু ছড়িয়ে পড়া কমবে।

ফোনের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে জীবাণু্।

এ জন্য ফোনটি যাতে ভাইরাসের সংস্পর্শে না আসে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। বাথরুমে ফোন নিয়ে যাওয়া যাবে না। বাথরুমে গেলে ফোনটি কোটের পকেট বা পার্সে রেখে যেতে পারেন।

আপনার ফোনটি যত নিরাপদ রাখবেন আপনার সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা তত কমবে। যখন ফোনটি কোথাও রাখবেন, ততখন একটা ন্যাপকিন দিয়ে জায়গাটা মুছে ফেলবেন, তারপর রাখবেন। এটি আপনাকে ফোনের জীবাণু থেকে রক্ষা করবে।

হাতে গ্লাভস ব্যবহার করে বাজারে বিভিন্ন ফলমূল, শাকসবজি, পেঁয়াজ-রসুন এসব বাছাই করুন।।

খালি হাতে এগুলো করতে যাবেন না। আপনি কোনও দোকান থেকে পণ্য আনার পর কাপড়ের ব্যাগগুলো স্যানিটাইজ দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন যাতে ভবিষ্যতে এটা আবার ব্যবহার করতে পারেন। ভ্রমণের জন্য আরও ছোট প্লাস্টিকের বা বায়োডেগ্র্যাডেবল ব্যাগ রাখতে পারেন। আপনি বাড়িতে পৌঁছানোর সময় আপনার হাতগুলি ধুয়ে ফেলুন, পাশাপাশি আপনি যে কোনও পণ্য ব্যবহার করেন সেগুলোও ধুয়ে ফেলুন।

আরেকটি প্রধান বিষয় হলো- অন্যদের কাছ থেকে কমপক্ষে এক মিটার বা তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কেননা হাঁচি, কাশি বা কথা বলার সময় মানুষের নাক বা মুখ থেকে যে ড্রপলেটস বের হয়, তাতে ভাইরাস থাকতে পারে। আর আক্রান্ত ব্যক্তির খুব বেশি কাছে গেলে শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে এই ড্রপলেটস কোভিড-১৯ এর ভাইরাস নিয়ে আপনার মধ্যে ঢুকতে পারে।

বাংলাদেশে লকডাউন শিথিল করায় ও মার্কেটসহ নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান চালু করার ঘোষণা দেয়ায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই যাদের বাইরে বের না হলে কোনো ধরনের অসুবিধা নেই, তাদের ঘরে থাকা উচিত।

মাস্ক পরার সময় নাক-মুখ পুরোপুরি ঢেকে দিতে হবে।

নাকের সঙ্গে মাস্কের মাঝখানে যাতে কোনো শূন্যস্থান না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মাস্কের ভেতরে যাতে বাতাস প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। নাক বা থুতনি বাইরে বেরিয়ে থাকলে দুটি মাস্ক পরেও কোনো লাভ হবে না।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে বাইরে থেকে আসার পর পুরো শরীরে সাবান মেখে গোসল করে নিতে হবে। এর আগে পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে যাওয়া যাবে না। পরিবারে বয়স্ক বা শারীরিকভাবে অসুস্থ বা ঝুঁকিপূর্ণ কেউ থাকলে তাদের কাছ থেকে এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এছাড়াও বাইরের পরিহিত পোশাক বাসায় আসার সাথে সাথেই গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে কমপক্ষে ২ ঘণ্টা। বাইরের জুতাও ঘরে আনা যাবেনা।

এই সময়টা আমাদের সবার জন্যই খুব কঠিন। এতদিন ঘরে থেকে আমরা সবাই হাঁপিয়ে উঠেছি। তবু আমাদের এখন নিজের এবং পরিবারের সুস্থতা কামনা করেই খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবেনা। বের হলেও প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সবাই আবার সুস্থ হয়ে উঠুক এটাই এখন আমাদের একমাত্র কাম্য।

নিউজ ডেস্ক/বিজয় টিভি

You might also like