বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবসে প্রধানমন্ত্রীর বাণী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস ২০২০ উপলক্ষে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস ২০২০ উপলক্ষে ফিজিওথেরাপি বিভাগ, সিআরপি’র উদ্যোগে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হওয়ায় আমি আনন্দিত। রোগীদের ও সমাজের প্রতি বিশ্বের সকল ফিজিওথেরাপিস্টগণের অসামান্য অবদানের বিষয়টি যথাযথভাবে মূল্যায়নের উদ্দেশ্যেই ১৯৯৬ সাল থেকে প্রতি বছর এ দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘কোভিড-১৯ পরবর্তী পুনর্বাসন’ অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই স্বাধীনতার অব্যবহিত পরই বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম চালু হয়। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে জাতির পিতার নির্দেশে ডাঃ আর জে গার্স্ট এর সরাসরি তত্ত্বাবধায়নে তৎকালীন মুক্তিবাহিনী হাসপাতাল বর্তমানে National Institute of Traumatology & Orthopaedic Rehabilitation (NITOR) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এদেশে পুনর্বাসন সেবার সূচনা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাজ্যের নাগরিক ভ্যালরি অ্যান টেইলর বর্তমান শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গুদাম ঘরে ১৯৭৯ সালে সিআরপি’র কার্যক্রম শুরু করেন। সিআরপি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের চিকিৎসা, শিক্ষা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসন সেবা প্রদান করে যাচ্ছে।
আমাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী গত এগারো বছরে আমরা স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছিলাম। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়। ফলে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়। ২০০৮ সালে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের পর স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোড়গোরায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে পুনরায় আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করি। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করেছি। যেখানে বিনামূল্যে ৩০ প্রকার ঔষধ দেওয়া হচ্ছে। আমরা জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি ২০১১ প্রণয়ন করেছি, ‘সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা’ অর্জনকে অগ্রাধিকার দিয়ে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের শেষ প্রান্তে।
আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধীতার ঝুঁকিতে থাকা মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র এবং ৩২টি মোবাইল থেরাপি ভ্যানের মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ে মানুষকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। গত এগারো বছরে ৫০ লক্ষাধিক ফিজিওথেরাপি সেশনের মধ্যে ৪০ লক্ষ সেশন আমরা প্রান্তিক মানুষের মধ্যে পৌঁছে দিতে পেরেছি। ফিজিওথেরাপি বিভাগ সিআরপি, প্রতিবছর বিভিন্ন বিভাগীয় শাখার মাধ্যমে ৫ লক্ষাধিক ফিজিওথেরাপি সেবা প্রদান করেছে।
আমাদের সরকার অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে চলমান করোনা মহামারি মোকাবিলা করে চলছে। করোনা পরবর্তী পুনর্বাসনে ফিজিওথেরাপি বিভাগ, সিআরপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। আসুন, আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধীতার ঝুঁকিতে থাকা সকল জনগণের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করি এবং তাঁদের জীবনমান উন্নয়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে একযোগে কাজ করি।