মোদির নির্বাচন নীতি
এমনিতেই ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবস্থায় খারাপ। সম্প্রতি জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যেভাবে পরস্পরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি করলেন, তাতে সেই সম্পর্ক তলানির দিকে ঠেলে নিয়ে গেছে।
জাতিসংঘের অধিবেশনের ফাঁকে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠকে বসবেন বলে কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত বৈঠকের ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে ভারত বৈঠকটি বাতিল করেছে। বৈঠক বাতিলের কারণ হিসেবে তারা বলেছে, পাকিস্তান লাগোয়া সীমান্তে ভারতের তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন এবং কাশ্মীরের নিহত এক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পাকিস্তান ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এ দুই ঘটনার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের ‘আসল চেহারা’ প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো, ভারতের সাধারণ নির্বাচনের ছয় মাস আগে দিল্লির এ প্রতিক্রিয়া দেখানোয় প্রকারান্তরে দিল্লির তথা বিজেপি সরকারের আসল চেহারা বেরিয়ে গেছে। আসল কথা হলো, নির্বাচনের আগে মোদির সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা দেখাতে চায় না।
বিজেপি আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায় কট্টর হিন্দুত্ববাদী প্ল্যাটফর্মের ওপর দাঁড়িয়ে। উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ভারতে মুসলমানদের প্রতি বৈরিতা পোষণে যেমন গর্ববোধ করে, একইভাবে পাকিস্তানের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন থাকাটাকেও তারা আদর্শ বলে মনে করে। এ কারণে নির্বাচনের আগে নিউইয়র্কে বসে হাসিমুখে পাকিস্তানের নেতাদের সঙ্গে হাত মেলালে তাতে মোদির লাভের চেয়ে লোকসান হতো বেশি।
পাকিস্তানও যে খুব একটা সরলতার পরিচয় দিয়েছে, তা নয়। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, ভারতের সন্ত্রাসীরা নাকি পাকিস্তানকে চারপাশ থেকে ঘেরাও করে রেখেছে। তাঁর এ অভিযোগের পক্ষে এখন পর্যন্ত কোনো আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক বা বিশ্লেষক মত দিয়েছেন বলে শোনা যায়নি। কোরেশি ২০১৪ সালে পেশোয়ারের স্কুলে সন্ত্রাসী হামলার জন্য ভারতকে দায়ী করেছেন। তবে এ পর্যন্ত সব ধরনের প্রতিবেদনে ওই হামলার পেছনে পাকিস্তানের নিজ ভূমিতে বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসী গ্রুপ তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান জড়িত বলে তথ্য উঠে এসেছে।
গত মাসে বিজেপি কাশ্মীরের লাইন অব কন্ট্রোলে ভারতীয় বাহিনীর অভিযানের বার্ষিকী পালন করেছে বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে। যদিও এ ধরনের অভিযানে ভারতের কতটা লাভ হয়েছে, তা তর্কসাপেক্ষ। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে মোদির অন্যতম অ্যাজেন্ডা হলো পাকিস্তানবিরোধিতা।
এ মুহূর্তে মোদির পররাষ্ট্রনীতি চলছে হঠকারী নীতি মেনে। পরিকল্পিত নীতি মেনে পররাষ্ট্রনীতি চলছে না। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, এ হঠকারী নীতি ততটাই প্রকট হয়ে উঠবে।
এ মুহূর্তে মোদির পররাষ্ট্রনীতি চলছে হঠকারী নীতি মেনে। পরিকল্পিত নীতি মেনে পররাষ্ট্রনীতি চলছে না। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, এ হঠকারী নীতি ততটাই প্রকট হয়ে উঠবে।
নিউজ ডেস্ক / বিজয় টিভি