কুমিল্লার হোমনা উপজেলায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে হাত মাইকে ঘোষণা দিয়ে চারটি মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করার ঘটনায় অজ্ঞাত ২ হাজার ২০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। হোমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তাপস কুমার সরকার বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে এই মামলাটি দায়ের করেন।
এসআই তাপস কুমার সরকার জানান, মব সৃষ্টি করে ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অজ্ঞাত ২ হাজার থেকে ২২ শত জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা মামলার তদন্ত শুরু করেছি। কিছু দূর কাজ করি আগে, তারপর বিস্তারিত বলা ঠিক হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে উপজেলার আসাদপুর ইউনিয়নের আসাদপুর গ্রামে অভিযুক্ত মহসীনের দাদা কফিল উদ্দিন শাহ্ মাজার, তার পাশেই আবদু শাহর মাজার, কালাই (কানু) শাহর মাজার এবং হাওয়ালি শাহর মাজারে ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া হাওয়ালি শাহর মাজার চত্বরেও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
হোমনা থানার ওসি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান , মূলত ধর্ম নিয়ে কটুক্তিমূলক পোস্ট দেয়ার অভিযোগে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। তবুও সকালে বিক্ষুব্ধ লোকজন মাজারে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ফেসবুক পোস্টের এক দেড় ঘণ্টার মধ্যে আমরা মহসীনকে আটক করি, তাও এই মব ঠেকাতে পারিনি। এটা খুবই দুঃখজনক।
তিনি আরো বলেন, ঘটনার পর থেকে আসাদপুর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হোমনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমা জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মো. মহসীন (৩৫) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি উপজেলার ফকিরবাড়ির আলেক শাহর ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, বুধবার বেলা ১১টার দিকে ‘বেমজা মহসিন’ নামের একটি আইডি থেকে মহানবী হযরত মুহাম্মদকে (সাঃ) নিয়ে কটূক্তি করে একটি পোস্ট দেয়া হয়। এতে এলাকার লোকজন ক্ষুব্ধ হয়। তখন তারা মহসীনের গ্রেপ্তার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভের মুখে পুলিশ মহসীনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।
ওই দিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ইসলামী যুব সেনা হোমনা উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরীফুল ইসলাম অভিযুক্ত মহসীনের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হোমনা থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মহসীনকে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হয়।
এর জের ধরে সকালে উত্তেজিত জনতা জড়ো হন। এ সময় হাত মাইকে মাজার ও বাড়িতে হামলার ঘোষণা দেন। তারা প্রথমে মহসিনের বসতবাড়িতে হামলা চালায়। পরে সেখানে থাকা কফিল উদ্দিন শাহর মাজারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। সবশেষ মাজারের চত্বরে থাকা তিনটি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে হামলাকারীরা। এতে সেখানে থাকা একটি মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য আসবাবপত্র পুড়ে যায়।
এরপর হামলাকারীরা মিছিল নিয়ে গ্রামের আবদু শাহর মাজার, কালাই (কানু) শাহর মাজার এবং হাওয়ালি শাহর মাজারে ভাঙচুর করে। হাওয়ালি শাহর মাজার চত্বরেও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।