দেশের সফটওয়্যার ও সেবা পণ্য নির্মাতাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) আয়োজিত সফটওয়্যার মেলা (বেসিস সফটএক্সপো) শুরু হয়েছে। চার দিনব্যাপী এবারের প্রদর্শনী রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ‘ওয়েলকাম টু দ্য স্মার্টভার্স’ প্রতিপাদ্যে শুরু হওয়া এই মেলা শেষ হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সম্মানিত বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
অনুষ্ঠানে স্পিকার বলেন, প্রতিদিনই আমাদের সফটওয়্যার নির্ভরশীলতা বাড়ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সফটওয়্যারের কোনও বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে বেসিসের সদস্যরা সবচেয়ে বেশি অবদান রাখবে বলে আশা করি। বেসিস সভাপতি ৫ বিলিয়ন থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার আয় করতে রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট, সরকারি সহায়তা এবংইন্ডাস্ট্রির জন্য সুযোগ নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। তিনি তিনটি খাতকে একটি ছাতার নিচে আনতে বলেছেন। এক্ষেত্রে আগামীতে বিস্তারিত কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ই-ফাইলিং, প্রশ্নোত্তর পর্বসহ জাতীয় সংসদের ডিজিটালাইজেশনে কাজ করেছে বেসিস। ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট গভর্নমেন্ট নামে চারটি স্তম্ভ নির্ধারণ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রেও বেসিস অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব সুবিধা অব্যাহত থাকবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশের প্রথম প্রোগ্রামার হানিফ উদ্দিন মিয়ার কোডিং থেকে বাংলাদেশের সফটওয়্যার খাতের যাত্রা। এখন এইখাত বহুগুণ সমৃদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের রফতানি বিকেন্দ্রীকরণের কথা জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি খাতই একমাত্র খাত যেখানে শুধু মেধার মাধ্যমে শতভাগ ভ্যালুয়েশন সম্ভব। আমাদের দুটি জায়গায় কাজ করতে হবে। একটি হলো মেধাসম্পদ সংরক্ষণ ও আরেকটি হলো শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন। ২০২৪ সাল পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি খাত যে করমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে সেটির সময় বৃদ্ধির জন্য বেসিসসহ আইসিটি খাতের পাঁচটি সংগঠনকে এখনই পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আইসিটি এখন অন্যতম শিল্প খাত হয়ে উঠেছে। ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে বর্তমানে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার রফতানি হচ্ছে। ২০২৫ সাল নাগাদ সেটি ৫ বিলিয়ন ডলারের উন্নীত করতে সরকার ও বেসিস যৌথভাবে কাজ করছে। রফতানি উৎসাহিত করতে ১০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। দেশের সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড সংযোগ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।
বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, সরকার, ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়ার সমন্বয় ঘটলে আমরা ২০৩১ সাল নাগাদ ২০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় করতে পারবো। ধারাবাহিকভাবে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অগ্রসর হতে পারবো।
বেসিস সফটএক্সপো ২০২৩-এর আহ্বায়ক ও বেসিসের সহ-সভাপতি (প্রশাসন) আবু দাউদ খান জানান, এবারের আয়োজনে ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা নতুন উদ্যোগকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিজনেস লিডারস মিট ও সমাপনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের আট শতাধিক কর্মকর্তা অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে অ্যাম্বেসেডর নাইট, মন্ত্রীদের অংশগ্রহণে মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স, তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনবল ও চাকরির খোঁজ দিতে আইটি জব ফেয়ার এবং ক্যারিয়ার ক্যাম্প, বিটুবি ম্যাচমেকিং সেশন, ফ্রিল্যান্সিং কনফারেন্স, স্টার্টআপ কনফারেন্স, ডেভেলপার্স কনফারেন্স, উইমেন ইন আইটি প্রোগ্রাম, জাপান ডে’সহ নানা আয়োজন থাকছে।
এছাড়া বেসিস সফটএক্সপোতে অনুষ্ঠিত হবে অন্তত ১৮টি সেমিনার ও গোলটেবিল বৈঠক। যেখানে সংশ্লিষ্ট খাতের সরকারি বেসরকারি নেতৃবৃন্দ আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।