পবিত্র রমজান মাসে সংযম না করে বিএনপি যত কর্মসূচি পালন করবে, ততই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সোমবার (১১ মার্চ) দুপুরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দলের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
রমজানে বিএনপি সরকারবিরোধী কর্মসূচি চালিয়ে যাবে– সাংবাদিকদের এমন কথার জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এতে তাদের জনসম্পৃক্ততা অব্যাহতভাবে কমতে থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিদেশিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করি। তাদের কথায় রাজনীতি করি না। রাজনৈতিকভাবে পরাজিত, বিপর্যস্ত বিএনপির পায়ের তলার মাটি ক্রমেই সরে যাচ্ছে। দেশের মানুষকে বাদ দিয়ে বিদেশিদের কাছে নালিশ করা– এই অসম্মানজনক কর্মকাণ্ড তারা চালিয়ে যাচ্ছে।’
বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘নিরপরাধ ব্যক্তি এখানে নিপীড়নের শিকার হচ্ছে না। যারা অপরাধী, সন্ত্রাস করে, আগুন সন্ত্রাসে জড়িত জনগণের জানমাল রক্ষায় তাদের ছাড় দেওয়া কোনও দেশপ্রেমিক সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। বিএনপি নেতাকর্মীদের জেলে থাকা নিয়ে দলটির শীর্ষ নেতারা ক্রমাগত মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনা মানবতার প্রতীক। গত ৪৮ বছরে তার অর্জনের ধারে কাছেও কেউ যেতে পারেনি। বিএনপি খুনি-সন্ত্রাসীদের দল। মানুষ পুড়িয়ে মারার দল। দুর্নীতির বরপুত্র তারেক রহমান আজ যে দুর্নাম অর্জন করেছে, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। বিএনপি তাকে যতই নেতা বানানোর চেষ্টা করুক দেশের জনগণ মেনে নেবে না। যতদিন তারেক রহমান থাকবে ততদিন বিএনপি স্বাভাবিক কারণে জনবিচ্ছিন্ন ও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। বিএনপির মিথ্যাচার এখন দলটির নেতাকর্মীরাও বিশ্বাস করে না।’
এ সময় সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনে সহিংসতাকারীদের বিষয়ে সরকারের শক্ত অবস্থান তুলে ধরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি ছত্রছায়ায় যদি কোনও অপরাধ ও অপকর্ম হয়ে থাকে এবং সরকার যদি কাউকে ছাড় না দেয়, বুঝতে হবে এখানে সরকার শূন্য সহিষ্ণুতা বজায় রেখেছে। অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে বিচার করা হবে। অপরাধী যতই প্রভাবশালী হোক।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমি যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ বুঝি না। অপরাধী অপরাধীই। অপরাধী যেই হোক, ছাড় দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর।’
রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের একটা বিষয় আছে। সরকার সতর্ক ও সর্বাত্মক প্রয়াস চালাচ্ছে, যাতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিশ্ব সংকটের প্রেক্ষাপটেও এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছে, যেটা বিএনপির সময় হয়নি। তারা শুধু দাম বাড়াতে পারে। বিশ্ব সংকটের মধ্যে তেলের দাম কমানো নিয়ে যারা সরকারের প্রশংসা করে না তারা বিরোধিতার নামে বিরোধিতা করে।’
তিনি বলেন, ‘গতবারের মতো এবারও রমজানে সরকারের পাশাপাশি দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনও ইফতার পার্টি করা হবে না। এর পরিবর্তে সারা দেশে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গরিব ও সাধারণ মানুষের মাঝে ইফতার, ত্রাণসামগ্রী বিতরণের নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
ময়মনসিংহ, কুমিল্লা সিটিসহ ২৩৩টি স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সারা দেশে একযোগে এই নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচন নিয়ে অনেক অপপ্রচার হয়েছে দেশে-বিদেশে। ভোটার উপস্থিতি নিয়ে অনেক অপবাদ ছড়ানো হয়। কেউ কেউ বিবৃতি দিয়ে এই নির্বাচনের বিষয়ে বিতর্কিত খবর পরিবেশন করেছেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশের সাধারণ নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকার নির্বাচনে টার্ন আউট ঈর্ষণীয়। নির্বাচন কমিশন বলছে টার্ন আউট ৬০ শতাংশ। নির্বাচনের প্রতি জনগণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে– এ ধরনের অপপ্রচারের বাস্তব ভিত্তি নেই। রাজনীতির প্রতি জনগণের আগ্রহ ক্রমে বাড়ছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে টার্ন আউট প্রমাণ করে নির্বাচনের প্রতি জনগণের আকর্ষণ আরও বাড়ছে এবং শেখ হাসিনার হাতেই এ দেশের গণতন্ত্র নির্বাচন ব্যবস্থা নিরাপদ। বিশ্ব সংকটে আমাদের পরিকল্পনা সাজাতে হবে। শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন, তিনি যথার্থ ক্রাইসিস ম্যানেজার। সারা বিশ্বই তার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছে।’
সভায় আরও ছিলেন– দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।