ফেনীর নবাগত পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেছেন, বিদেশগামীদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বা ভেরিফিকেশন নিয়ে কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করা হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের কোনো সদস্য যদি স্পিড মানি দাবি করে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পুলিশ লাইনস ড্রিল শেডে ফেনীতে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
পুলিশ সুপার বলেন, বিগত ১৬ বছর পুলিশকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের কিছু ভুল-ত্রুটি ছিল। এজন্যই পুলিশ এত বিতর্কিত। এ বিতর্কিত অবস্থা থেকে বের হয়ে দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা অনুযায়ী সবাইকে নিয়ে জনবান্ধব পুলিশি কার্যক্রম পরিচালনায় কাজ করার চেষ্টা করব। ফেনীবাসীর মতো করে জেলা পুলিশকে সাজানো হবে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন। রাতারাতি সবকিছু পরিবর্তন করা না গেলেও সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। আমার কাজে যদি কোনো ভুল-ত্রুটি থাকে তাতেও লেখনীর মাধ্যমে গঠনমূলক সমালোচনা করবেন।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রধারীদের আটকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সেই অস্ত্রধারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা এখন আমাদের মূল কাজ হবে। ইতোমধ্যে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ফেনীতে সকল পুলিশ কর্মস্থলে রয়েছে। নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছে। ৫ আগস্ট আটটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাই কিছুটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। আমরা ৮০ শতাংশ কাজ শুরু করেছি। আশা করি অন্যান্য কাজও শিগগিরই শুরু করতে পারব।
শহরে যানজট নিরসনে সবার সহযোগিতা কামনা করে পুলিশ সুপার বলেন, যানজট নিরসন পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছি। আরও আলোচনা করে সবার সহযোগিতা নিয়ে শহরের দীর্ঘদিনের এ সমস্যা সহনীয় পর্যায়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।
ফেনীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রসঙ্গে মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ফেনীতে ৪ আগস্টের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও যদি কোনো অভিযোগ থাকে, আমাকে অবহিত করলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিতর্কিত পুলিশ সদস্যদের এক থানা থেকে অন্য থানায় রদবদল করা হয়েছে। তাদের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) বিষয়েও কাজ চলছে। ৪ আগস্টের ঘটনায় জড়িত কেউ যদি মামলা থেকে বাদ পড়ে তাদেরও আসামি করার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে কাজ করা হবে উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, কিশোর গ্যাং সমস্যা সব জায়গায় বিরাজমান। এদের কোনো দলীয় পরিচয় নেই। নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা বিভিন্ন পরিচয় ব্যবহার করে। জেলায় কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পক্ষ থেকে যত প্রকারের ভূমিকা নেওয়া সম্ভব তা আমি নেব।
তিনি আরও বলেন, পেশাদারিত্ব ও সততার মাধ্যমে ফেনীবাসীকে নির্ভেজাল সেবা দিতে চাই। মানুষ যেন নিরাপদে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারে সেজন্য সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করব। কাজের মাধ্যমে ফেনীকে রোল মডেল করতে চাই।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) দীন মোহাম্মদ (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), মো. শাহাদাৎ হোসেন (ক্রাইম অ্যান্ড অবস), পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ফেনীতে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।