গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির পর নড়াইলে খাল বিলের ঐতিহ্যের ধারক তালের ডুঙ্গা তৈরি ও বিক্রি জমজমাট হয়ে উঠেছে।বর্ষার আগমনে তালের ডুঙ্গা তৈরির কারিগররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বর্ষাকালে তালের ডুঙ্গা চড়ে কৃষকরা কৃষি কাজ সেরে থাকেন।মাছ ধরা এবং শাপলা তোলার কাজেও তালের ডুঙ্গা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। খাল বিল বেষ্টিত এ দেশে সুপ্রাচীনকাল থেকে নৌকার মতো তালের ডুঙ্গাও পানিতে বাহন হিসেবে কৃষি ও মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।তালের ডোঙ্গা এ দেশের নৌকাজাতীয় যানবাহন হিসেবে আদিকাল থেকে খাল-বিল ও মৎস্য ঘেরে জলবাহন হিসেবে ব্যবহ্্রত হয়ে আসছে।
এখন বর্ষার পানিতে টইটুম্বুর। এ সময় নড়াইলের খাল-বিল ও ঘের এলাকার মানুষের চলাচলের নিয়মিত একটি বাহন হলো তালের তৈরি ডুঙ্গা। তালগাছ মাঝামাঝি দু’ভাগ করে চিরে তার ভেতরের অসার দ্রব্য তুলে গর্ত করে করে এ জলবাহন তৈরি করা হয়ে থাকে। নড়াইল তথা দক্ষিণাঞ্চলে এটি ‘তালের ডুঙ্গা’ নামেই পরিচিত। তালগাছ থেকে তৈরি ও দেখতে ডিঙ্গি নৌকার মতো বলেই স্থানীয়ভাবে একে তালের ডুঙ্গা বলা হয়।
নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায় এখন তাল গাছের তৈরি ডুঙ্গার ব্যবহার চলছে। খাল আর বিলের পাশ্ববর্তী হাজারো মানুষের এখন একমাত্র বাহন এ ডুঙ্গা। বর্ষাকালে নিম্নভূমি, ডোবা, নালা, খাল, বিল যখন পানিতে থইথই করতে থাকে, তখন সেসব জলাভূমিতে যাতায়াত ও মাছ ধরার জন্য তালের ডুঙ্গা ব্যবহার করা হয়।
গ্রামীণ জনপদের অতি প্রয়োজনীয় এ বাহন খালে , বিল থেকে মাছ ধরতে,আর সাম্প্রতিক সময়ে মৎস্য ঘেরে খাবার দিতে বেশি ব্যবহার করা হয়। আকারে ছোট আর চালাতে সহজ বলে এ জলবাহন অতি সহজে সবাই ব্যবহার করতে পারেন। একটা তালের ডুঙ্গা সাধারণত ১৫-২০ ফুট লম্বা হয় এবং চওড়া হয় ১-২ ফুট।এক-দু’জনের বেশি সাধারণত একটা তালের ডুঙ্গায় ওঠা যায় না। ছোট আকারের বৈঠা কিংবা লম্বা চিকন শক্ত বাঁশের টুকরো চৌড় দিয়ে পানির মধ্যে ঠেলে ঠেলে তালের ডুঙ্গা চালানো হয়।
তালের ডুঙ্গা কেনাবেচার জন্য তুলারামপুরের হাটটি প্রসিদ্ধ। এ হাটটিকে জেলার সবচেয়ে বড় ডুঙ্গার হাট বলা হয়ে থাকে।এখানে সপ্তাহে শুক্রবার আর সোমবার হাট বসে। এছাড়া জেলার কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী হাটও প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার ডুঙ্গার হাট বসে।
বর্ষার শুরু জুন-জুলাই মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এসব হাটে ডুঙ্গা কেনা-বেচা বেশি চলে।এ বছর বর্ষার আগমন দেরিতে হওয়ায় চলতি মাসের প্রথম থেকে ডুঙ্গার বেচাকেনা জমে উঠেছে। এছাড়া মৎস্য ঘেরে ব্যবহারের জন্য প্রায়ই সারা বছর কম-বেশি ডুঙ্গা কেনা-বেচা হয়।