ঢাকার কেরানীগঞ্জের মালোপাড়ায় বাবা-ছেলেকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আরিফ ওরফে সরিফুল ইসলামকে (৫২) গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার পর আরিফ বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিল। সে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় এসে নাম ও পরিচয় গোপন করে সরিফুল ইসলাম নামে একটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে ঢেউটিন ফ্যাক্টরিতে কাজ করতো।
তার ধারণা ছিল ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করলে সে গ্রেপ্তার এড়াতে পারবে। পরে ঢেউটিন ফ্যাক্টরিটি বন্ধ হয়ে গেলে আরিফ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সরিফুল পরিচয়ে মুদি ও লন্ড্রি দোকানের ব্যবসা করে আসছিলো।
র্যাব জানায়, ১৯৯৩ সালের ১৩ জুলাই কেরানীগঞ্জের মালোপাড়া বারিশুর বাজারে একটি মুদি দোকানে বাবা-ছেলেকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০০৪ সালের ২১ জুলাই আদালত আরিফসহ ৫ জনকে ‘ডাবল’ মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করেন। ২০০৮ সালে হাইকোর্ট কর্তৃক পুনর্বিচারের জন্য মামলাটি নিম্ন আদালতে প্রেরণ করা হয়। পরে নিম্ন আদালত সকল বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আরিফসহ ৫ জনের ‘ডাবল’ মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। রায় ঘোষণার সময় আরিফ ও মাসুদ পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে আদালত সাজা পরোয়ানা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
জানা যায়, ঘটনার দিন শরিফ প্রতিদিনের মতো রাতে কাজ শেষ করে দোকান বন্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল এবং দোকানের পেছনের অংশে তার দুই ছেলে ঘুমাচ্ছিল। তখন শরিফের দোকানে গ্রেপ্তার আরিফ ও তার অন্যান্য সহযোগীরা এসে সিগারেট ও অন্যান্য মালামাল জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিলে বাকবিতণ্ডা হয়।
পরবর্তীতে তারা দোকানের ক্যাশবাক্স থেকে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে শরিফ বাধা দেয়। এ সময় আরিফ ও তার সহযোগীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। ওই সময় চিৎকার শুনে দোকানের পেছনের অংশে ঘুমিয়ে থাকা শরিফের দুই সন্তান বাবাকে বাঁচাতে আরিফ ও তার সহযোগীদের হাতেপায়ে ধরে আকুতি-মিনতি করতে থাকে। কিন্তু তারা ভিকটিমের দুই সন্তানকেও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে ৩ জনই মারা গেছে ভেবে তারা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।
ঘটনার পরদিন ভোরে স্থানীয়রা নিহত শরিফের দোকান খোলা দেখে সেখানে যায় এবং দোকানের ভেতরে তিনটি নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে শরিফের বড় ছেলেকে খবর দেয়। পরে বড় ছেলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখে তার বাবা ও ছোট ভাই খোকন মৃত্যুবরণ করেছে। এছাড়া অপর ভাই শাহজাহান গুরুতর জখম অবস্থায় পড়ে আছে। ওই সময় শাহজাহানকে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়।
ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ভিকটিম শরিফুল কেরানীগঞ্জের মালোপাড়া বারিশুর বাজারে মুদি দোকানের ব্যবসা করতেন। গুদারাঘাট সংলগ্ন দোকান হওয়ায় শরিফ প্রায়সময়ই মধ্যরাত পর্যন্ত বেচা-বিক্রি করতেন। তার দুই ছেলে খোকন (তৎকালীন বয়স ৯) ও শাহজাহান (তৎকালীন বয়স ১২) নিয়মিত শরিফের রাতের খাবার বাসা থেকে নিয়ে আসতো। পরে তারা বাবার সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে পড়াশোনা করে দোকানেই ঘুমিয়ে পড়তো। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার আরিফের বিরুদ্ধর প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।