স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, ‘মন্ত্রী হওয়ার পর এটাই (দিনাজপুরে) প্রথম আমার পরিদর্শন। পরিদর্শনের পর চিকিৎসক, পরিচালক, হুইপসহ অন্যান্যদের কাছে আমি অনেক কিছু শুনেছি। কিন্তু আমি তো এখানে বসেই সবকিছু সমাধান করতে পারবো না। তবে আমরা অ্যাকশন নিচ্ছি। সিটি স্ক্যান মেশিনসহ হাসপাতালের যাবতীয় যন্ত্রপাতির বিষয়ে যত দ্রুত সমাধান করা যায় সে নিয়ে আমি কাজ করবো। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা করা, আমি চাই না যে দিনাজপুরের কোনও রোগী ঢাকায় যাক। এখানেই চিকিৎসা হোক।’
তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকরা থাকেন না কেন, কী ব্যাপার এটা আমি দেখবো। আমার একটাই নির্দেশ, যখন যে চিকিৎসককে যেখানে বদলি করা হবে তাকে থাকতে হবে। কারও প্রতি অবহেলা বা অন্যায় আচরণ করবো না, কিন্তু নিয়ম মেনে যাকে যখন যেখানে পদায়ন দেবো, তাকে সেখানেই থাকতেই হবে। এর মধ্যে কোনও কম্প্রোমাইজ নাই।’
রবিবার (১৪ জুলাই) দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার আবুল বাশার মো. খোরশেদ আলম, দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডাক্তার বোরহান-উল ইসলাম সিদ্দিকীসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
হাসপাতালগুলোকে স্বাবলম্বী করা ও ক্লিনিকগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, ‘ক্লিনিকের কোনও অনিয়ম দেখলে তা বন্ধ করে দেবো। আমি পঞ্চগড়ে একটি ক্লিনিকে গেছি, সেটি বন্ধ করে দিয়েছি। যেই ক্লিনিকে অনিয়ম দেখা যাবে, সেই ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমি তো হঠাৎ আসি, হঠাৎ যাবো। এটার জন্য আমি প্রত্যেক সিভিল সার্জনকে বলছি, ওনারা যেন এটার প্রতি নজর রাখেন। ওনাদের এখানে যদি কোনও অনিয়ম দেখি তাহলে আমি সিভিল সার্জনকে দায়বদ্ধ করবো।’
এর আগে দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজের মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়াম ভবনের উদ্বোধন, কলেজের আয়োজনে অডিটোরিয়ামে শুভাগমন উপলক্ষে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সামন্ত লাল সেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে আমি জাতীয় সংসদে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে যাবো। কেননা আমার দায়িত্ব হচ্ছে চিকিৎসকদের সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি রোগীদেরও সুরক্ষা দেওয়া। অনেক সমস্যা আছে, আমি অনেক কিছুই জানি, আমি নিজেও ভুক্তভোগী। সেজন্য চিকিৎসকদের মানোন্নয়ন, মর্যাদা ও অন্যান্য সমস্যার বিষয়ে আমি সারা দেশে স্বাস্থ্যসেবার বাস্তবচিত্র নিজের চোখে দেখার উদ্দেশ্য নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছি।’
সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘কয়দিন আগে আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি, সপ্তাহে দুই দিন ঢাকায় থাকবো। বাকি পাঁচ দিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্বাস্থ্য পরিস্থিতিসহ রোগী ও চিকিৎসকদের সমস্যা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। প্রধানমন্ত্রী আমাকে অনুমতি দিয়েছেন। অনুমোদন ছাড়া কোনও প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিক কাজ করতে পারবে না। তৃণমূল পর্যায়ে যদি চিকিৎসা সেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া যায় এবং চিকিৎসার মান উন্নত করা যায় তাহলে দেশের অনেক বড় বড় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রোগী শূন্য হবে। বর্তমান সরকারের মূল লক্ষই হচ্ছে, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি চিকিৎসকদের পেশাগত মর্যাদা ও মান উন্নত করা।’