আনতারা রাইসা: দক্ষিণ কোরিয়ার পপ ঘরানার মিউজিককে কে-পপ (কোরিয়ান পপ) বলা হয়। ব্যাংটান বয়েজ (বিটিএস), এক্সো, বিগব্যাং, গার্লস জেনারেশন, , ওয়ানা ওয়ান ইত্যাদি হচ্ছে কে-পপের জনপ্রিয় ব্যান্ড। কে-পপের খ্যাতি দুনিয়াজোড়া এবং এটি এখন শত শত কোটি ডলারের বিশাল সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে । কিন্তু এই জগতকে বাইরে থেকে যত জাঁকজমকপূর্ণ মনে হয় তা ভেতর থেকে নয় । কে–পপ তারকা হওয়া আদতে খুব কঠিন, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে গান আর নাচ জানা কোরীয় শিল্পীরা হয়ে ওঠেন প্রজন্মের তারকা। আবার সহজেই তাঁরা হারিয়ে যান জনপ্রিয়তার ভিড়ে।
কে পপ দের দুনিয়াজোড়া এই খ্যাতি কিন্তু সহজেই চলে আসেনা। শারীরিক পরিশ্রম যেমন লাগে তেমনি লাগে কঠোর মানসিক শক্তি। এই যুদ্ধে নেমে অনেকেই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেন না। তাঁরাই টিকে থাকেন, যাঁরা নিজেকে সর্বোচ্চ কষ্ট দিয়ে হলেও সফলতার চূড়ায় পৌঁছাতে চান।
কিছুদিন আগেই আমরা শুনেছি সাবেক কে পপ তারকা গো হারার আত্মহত্যার সংবাদ। এক মাস আগেই আত্মহত্যা করেছিলেন জনপ্রিয় কে পপ তারকা সুল্লি। প্রায়ই কে পপ তারকাদের বিরুদ্ধে শোনা যায় যৌন হয়রানির অভিযোগ। আসলে এই জাঁকজমক জীবনের পিছনে কি লুকিয়ে আছে কোনো অদেখা জীবন?
কে পপ বানানোর এই প্রশিক্ষণ শুরু হয় একেবারে শৈশব থেকে। উঠতি প্রতিভাদের খুঁজে নিতে প্রথমে তাদের অডিশন দিতে হয় বড় বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সামনে। এরপর কোনো তরুণ প্রতিভা পেলে তাঁর সঙ্গে লম্বা সময়ের জন্য চুক্তি করে প্রতিষ্ঠানগুলো। শুরু হয় সেই কঠোর প্রশিক্ষণ।কোম্পানিগুলো খুব অল্প বয়স থেকে সম্ভাব্য কে-পপ তারকা খুঁজে বের করে। শিল্পীদের শেখানো হয় গান, র্যাপ, নাচ—সব। এর পাশাপাশি চলে অভিনয়, ব্যক্তিত্ব উন্নতকরণ আর বিদেশি ভাষা শেখার ক্লাস। সেই ক্লাসের ফাঁকে শিল্পীদের উন্নতির মূল্যায়ন করা হয় প্রতিদিন। যারা এই মানদণ্ডে পিছিয়ে পড়েন তারা বাদ পরে যান। মাঝে মাঝে ১০/১৫ বছর ধরেও চলে এই প্রশিক্ষণ। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এমনভাবে একটি ব্যান্ডের বেড়ে ওঠার পরিকল্পনা করেন, যেন ব্যান্ড সদস্যরা অভিষেকের পর থেকে রাতারাতি খ্যাতি অর্জন করতে থাকেন। খ্যাতির এই যাত্রা একবার শুরু হয়ে গেলে, আর কোনোভাবেই শিল্পীর কোনো চাহিদাকে প্রাধান্য দেওয়া হয় না। দর্শক–শ্রোতা যা চায়, আর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের লাভ যেখানে, শিল্পীকে সেভাবেই চলতে হয়।
দক্ষিন কোরিয়ার হাই বিউটি স্ট্যান্ডার্ড এ পৌঁছানোর জন্য এই উঠতি তারকদের নিজেদের সঁপে দিতে হয় প্লাস্টিক সার্জারির ছুরির নিচেও। সেটাও নিজের ইচ্ছায় না কখনই। যে প্রতিষ্ঠানের সাথে তারা চুক্তিবদ্ধ তারা যে কোন সময় চাইলেই এই দাবি করতে পারেন।তারকাদের খুব কঠিন ডায়েট চার্ট অনুরসরণ করতে হয় এবং ব্যায়ামাগারে প্রচুর সময় দিতে হয়। নারী শিল্পীদেরকে সবসময় খুবই চিকন থাকতে হয়। নিজেদের ফিটনেস ধরে রাখতে প্রায়ই শিল্পীদের অত্যন্ত নির্মম জীবনযাপন করতে হয়।
কে পপ তারকাদের অর্থের কমতি নেই এটা আমরা সবাই ভাবি। কিন্তু অনেক ব্যান্ড অর্থনৈতিক সমস্যাতেও ভুগে।কারণ, অভিষেকের আগেই তাদের প্রশিক্ষণ ও প্রচারণা বাবদ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান যে পরিমাণ বিনিয়োগ করে, সেই বিনিয়োগের অর্থ শোধ করতে করতেই শিল্পীদের সব সৃজনশীলতা ফুরিয়ে যায়। আপনি যতই জনপ্রিয় হন না কেন, আপনি সরাসরি কোনো অর্থ আয় করতে পারবেন না। আপনার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি অর্থ আয় করবে এবং সেখান থেকে একটা সামান্য অংশ তারা আপনাকে বেতন হিসেবে দেবে।
আসলে এই কে পপ তারকাদের জগতটাকে আমাদের যত আরাধ্য মনে হয় সেটা ভিতর থেকে দেখলে তত নির্মম হয়ে ফুটে উঠে।
অনলাইন ডেস্ক/বিজয় টিভি