শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঢল নেমেছে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার হাজারো মানুষের। বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসতে দেখা যায় বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শহীদ মিনার এলাকায় বাড়তে থাকে ভিড়।
সকালে শহীদ মিনারে বেদী থেকে পলাশী পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে দেখা গেছে শ্রদ্ধা জানাতে আসা শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষকে দীর্ঘ লাইন। খালি পায়ে বুকে কালো ব্যাজ পরে ব্যানার ও পুস্পস্তবক নিয়ে প্রভাতফেরি করে ধীর পায়ে শহীদ মিনারের দিকে এগোতে দেখা যায় তাদের।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
১৯৫২ সালের এই দিনে ‘বাংলাকে’ রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ সে সময়ের শাসক গোষ্ঠির চোখ-রাঙানি ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসে। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শংকিত করে তোলায় সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।
একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি। এদিন দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সঠিক নিয়মে, সঠিক রং ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এরআগে একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদি।
শ্রদ্ধা জানাতে আসা ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী রাইদ রেহমান বলেন, ‘যাদের আত্মত্যাগে আমরা মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পেয়েছি, সেই শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে এসেছি। তাদের অবদান কখনই ভুলবে না বাংলাদেশে। আমরা বর্তমান প্রজন্ম শহীদ দিবসে তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঋদ্ধ শাহি বলেন, ‘শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো একটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। ভাষার জন্য, ভাষাশহীদ এবং যারা সেসময় সংগ্রাম করেছেন, অত্যচার-নিযার্তনের শিকার হয়েছে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা মুখে বলে প্রকাশ করার নয়। সর্বস্তরে বাংলাভাষার প্রচলনের পাশাপাশি, ইংরেজি ও অন্য বিদেশি ভাষার আগ্রাসনমুক্ত করতে পারলেই তাদের ভাষাশহীদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে।’