মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে নতুন আলুর কেজি পড়ছে ৮০ টাকা। পুরোনো আলুর দাম কোথাও কোথাও একটু কমে ৭০ টাকা কেজিতেও মিলছে। গত সপ্তাহ থেকে উভয় পদের আলুর দাম কেজিতে অন্তত ১০ টাকা বেড়েছে।
সাধারণত ডিসেম্বর মাস এলেই নতুন আলুতে সয়লাব হয়ে যায় বাজারগুলো। এসময় আলু দাম অনেকটা কমে যায়। পুরোনো আলুর দাম নতুন আলুর তুলনায় কম দামে কেনা যায়। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। ব্যবসায়ীরা অবশ্য বলছেন, এখনো নতুন আলু পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ হয়নি। সে কারণে নতুন ও পুরোনো দুই ধরনের আলুর দামই বাড়তি।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর ব্যবসায়ী মো. সোহরাব মিয়া বলেন, এই মাসের শুরুতে একটা বৃষ্টি হয়। এর পরেই বাজারে আলু সরবরাহ কমে যায় এবং দাম বাড়তে থাকে। আলুর দাম কয়েক দিন একটু বেশি থাকলেও পুরোনো আলুর দাম কখনো এত বেশি হতে দেখিনি।
তবে কাওরান বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, ভারত থেকে আলু আমদানি বন্ধ হওয়ার কারণেও বাজার চড়ে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এ সময়ে এবারই সর্বোচ্চ দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া গত মাসেও আলুর কেজি ৫০ টাকার আশপাশে ছিল।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গত রোববারের বাজারদরের তালিকানুযায়ী, ঢাকায় মানভেদে প্রতি কেজি নতুন ও পুরোনো আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। সরকারি সংস্থাটির হিসাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত এক মাসে আলুর দাম বেড়েছে ৩৭ শতাংশের মতো। গত বছরের এই সময়ে ঢাকার বাজারে নতুন ও পুরোনো আলুর কেজি ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা। এর মানে, দেশে এক বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ১৮৯ শতাংশ।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন বা হিমাগার সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, হিমাগারে পুরোনো আলু শেষ। এখন নতুন আলুর সময়। তবে এবার উঁচু জমিতে আগাম জাতের আলুর ফলন ব্যাহত হয়েছে। অন্যথায় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বাজারে আলুর সরবরাহ ব্যাপকভাবে বাড়ত এবং দামও কমত।
তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসেব মতে, গত মৌসুমে আলু উৎপাদিত হয়েছিল ১ কোটি ৪ লাখ টন। আবার কৃষি মন্ত্রণালয়েরই আওতাভুক্ত সংস্থা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী আলু উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ১১ লাখ টন। এ ছাড়া বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব বলছে, আলু উৎপাদিত হয়েছিল ১ কোটি ৯ লাখ টন। মন্ত্রণালয়সহ সরকারি তিন সংস্থার তথ্য বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যখন হিমাগার সমিতি জানায়, দেশে গত মৌসুমে সাকল্যে আলু উৎপাদিত হয়েছিল ৮০ থেকে ৮৫ লাখ টন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবমতে, দেশে বছরে আলুর মোট চাহিদা ৮০ থেকে ৮৫ লাখ টন। আবার কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে চাহিদা হচ্ছে ৮৯ লাখ টন। অন্যদিকে হিমাগার মালিক সমিতি মনে করে, দেশে আলুর চাহিদা ৯০ লাখ টন।