সম্প্রতি ইরানে গুপ্তহামলায় হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া নিহত হয়েছেন। এই হামলা ও হত্যাকাণ্ডের জন্য হামাস ও ইরান ইসরায়েলকে দায়ী করেছে এবং প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
এতে করে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাতের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এমন অবস্থায় ইসরায়েলে হামলা না চালাতে ইরানকে অনুরোধ করেছে যুক্তরাজ্য।
ইরানের নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক ফোনকলে এই অনুরোধ জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার ইরানের নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপের সময় ইসরায়েলের ওপর হামলা করা থেকে ইরানকে ‘বিরত’ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
ডাউনিং স্ট্রিট বলেছে, ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, তেমন কোনো পদক্ষেপে ‘ভুল হিসেব-নিকাশের গুরুতর ঝুঁকি রয়েছে এবং এখন শান্ত থাকার ও সতর্কতার সাথে পরিস্থিতি বিবেচনা করার সময়’।
বিবিসি বলছে, ২০২১ সালের মার্চে তৎকালীন ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সাথে ফোনে কথা বলেছিলেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এরপর মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে কিয়ার স্টারমারের ফোনালাপই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এবং ইরানের প্রেসিডেন্টের মধ্যে প্রথম ফোনকল।
উভয় দেশের সরকারপ্রধানের মধ্যে ৩০ মিনিটের এই আলোচনার খবর এমন এক সময়ে সামনে এসেছে যখন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইতালি এবং জার্মানির সাথে একটি যৌথ বিবৃতি জারি করেছে যুক্তরাজ্যও। এই বিবৃতিতে ইরানকে ইসরায়েলের ওপর হামলার হুমকি বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
তারা ইরানকে, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক হামলার চলমান হুমকি প্রত্যাহার করতে এবং এই ধরনের হামলা হলে আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য গুরুতর পরিণতি নিয়ে আলোচনা করার’ আহ্বান জানিয়েছে।
এসব দেশের নেতারা ফোনে একত্রে কথা বলেছেন এবং তারা ‘ইরানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবং ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষার’ জন্য তাদের সমর্থন প্রকাশ করেছেন।
মূলত সাম্প্রতিক সময়ে হিজবুল্লাহ ও হামাস নেতাদের হত্যার পর মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের আশঙ্কা বাড়ছে।
গত রোববার যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করেছে, তারা ইসরায়েলে ইরানি হামলার উদ্বেগের কারণে এই অঞ্চলে একটি গাইডেড মিসাইল সাবমেরিন পাঠিয়েছে। সাবমেরিনটি ১৫৪টি টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে, যা স্থল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতেও ব্যবহৃত হয়।
এছাড়া এফ-৩৫সি যুদ্ধবিমান বহনকারী মার্কিন রণতরী ইউএসএস আব্রাহাম লিংকনেরও সেখানে যাত্রা ত্বরান্বিত করার নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রণতরীটি ইতোমধ্যে এই অঞ্চলে আরেকটি মার্কিন জাহাজ প্রতিস্থাপনের পথে ছিল।
হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, ইসরায়েলের মতো যুক্তরাষ্ট্রেরও উদ্বেগ রয়েছে যে ‘ইরান এবং তার প্রক্সিদের সম্ভবত আগামী দিনে ইসরায়েলে আক্রমণ করার সম্ভাবনা ক্রমেই বাড়ছে’।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের কোন ভূমিকা নেই: হোয়াইট হাউজ
কিরবি আরও বলেছেন, ‘তাই আমরা ক্রমাগত ইসরায়েলি কর্মকর্তা এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের কর্মকর্তাদের সাথেও কথা বলেছি।’
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, ইসরায়েল তার শত্রুদের হুমকিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে এবং ‘আক্রমণ ও প্রতিরক্ষার জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতিতে’ রয়েছে তার দেশ।
ডাউনিং স্ট্রিট সোমবার আরও বলেছে, কেয়ার স্টারমার প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানকে বলেছেন— তিনি এই অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আর তাই আরও আঞ্চলিক সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য সমস্ত পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।