বিশ্ববাজারে হঠাৎ স্বর্ণের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম প্রায় ১০০ ডলার বেড়ে গেছে। এতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টির কাছাকাছি দামি এই ধাতুটির দাম। এখন বিশ্ববাজারে এক আউন্স স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৮০০ ডলার ছুঁইছুঁই।
বিশ্ববাজারে এমন দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে বিশ্ববাজারে সোনার দাম যে হারে বেড়েছে, দেশের বাজারে সেই হারে বাড়েনি। ফলে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আরও বাড়তে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। বাজুসের দায়িত্বশীল এক সদস্য জানান, দেশের বাজারে সর্বশেষ স্বর্ণের দাম বাড়ানোর পর বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম আরও প্রায় ৩০ ডলার বেড়েছে। বিশ্ববাজারে স্বর্ণের এই দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকলে দেশের বাজারে দাম বাড়বে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর সুদের হার কমানোর কথা বলেন। এছাড়া বিভিন্ন নীতি তিনি গ্রহণ করেছেন। এসব কারণেই বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়তে দেখা যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে প্রতি আউন্স সোনার দাম প্রায় ১০০ ডলার বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এক সপ্তাহে সোনার এত দাম বাড়েনি।
বিশ্ববাজারের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত সপ্তাহে লেনদেন শুরু হওয়ার আগে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ২ হাজার ৭০০ ডলার। সেখান থেকে দফায় দফায় দাম বেড়ে ২২ জানুয়ারি লেনদেনের এক পর্যায়ে প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৭৫০ ডলারে ওঠে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন বৈঠক করে বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি। পরদিন ২৩ জানুয়ারি থেকে স্বর্ণের নতুন দাম কার্যকর হয়। বাজুসের এই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৯৮৩ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৪২৬ টাকা।
এছাড়া ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৯০১ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৬৩৩ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার ৭১৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৩৮৮ টাকা বাড়িয়ে ৯৫ হাজার ৬২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের বাজারে এই দামেই সোনা বিক্রি হচ্ছে।
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসার সময় বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ২ হাজার ৭৪০ ডলারের মতো। এরপর তা আরও বেড়ে সপ্তাহ শেষে ২ হাজার ৭৭০ ডলারে থিতু হয়েছে। এতে গত এক সপ্তাহে প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়েছে ৭০ ডলার। অবশ্য সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস ২৪ জানুয়ারি লেনদেনের এক পর্যায়ে প্রতি আউন্স সেনার দাম ২ হাজার ৭৮৫ ডলার পর্যন্ত উঠে।
বিশ্ববাজারে এখন পর্যন্ত এক আউন্স স্বর্ণের দাম সর্বোচ্চ ২ হাজার ৭৯০ ডলার। গত ৩০ অক্টোবরে সোনার এই দাম হয়। বিশ্ববাজারে সোনার এই রেকর্ড দাম হওয়ার পর ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশে সব থেকে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম বাড়ানো হয় ১ হাজার ৫৭৫ টাকা। এতে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম দাঁড়ায় ১ লাখ ৪৩ হাজার ৫২৬ টাকা। দেশের বাজারে এটিই সোনার সর্বোচ্চ দাম।
বিশ্ববাজারে রেকর্ড দাম হওয়ার পরের দিন থেকেই অর্থাৎ ৩১ অক্টোবর থেকে পতনের মধ্যে পড়ে সোনা। কয়েক দফায় দাম কমে ১৪ নভেম্বর প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৫৪৭ ডলার পর্যন্ত নেমে যায়। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে দেশের বাজারে যেমন স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়, তেমনি বিশ্ববাজারে দরপতন দেখা দিলে দেশের বাজারেও স্বর্ণের দাম কমানো হয়। ৫ থেকে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে চার দফায় দেশের বাজারে ভালো মানের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৯ হাজার ১৭ টাকা কমানো হয়।
এরপর বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরেও কয়েক দফায় দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো বা কমানোর ঘটনা ঘটে। আর নতুন বছর ২০২৫ সালে এখনো পর্যন্ত দেশের বাজারে দু’দফা স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে। এই দুই দফা দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসার আগে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বড় অঙ্কে বাড়তে দেখা গেছে।
চলতি বছর দেশের বাজারে ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম দু’দফায় বেড়েছে ৩ হাজার ১৩৮ টাকা। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১৪৫ ডলার। এক আউন্স সমান ২৮ দশমিক ৩৫ গ্রাম। এ হিসাবে বিশ্ববাজারে চলতি বছর এখনো পর্যন্ত এক ভরি স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৭ হাজার ২৭৮ টাকা (এক ডলার সমান ১২২ টাকা ধরে)।