উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোতে এক নজিরবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনে ভোটাররা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে বিচারপতি ও ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচন করেছেন। এর মাধ্যমে মেক্সিকো হয়ে উঠেছে বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে সব বিচারপতি ও ম্যাজিস্ট্রেট সরাসরি জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। তবে এই পদক্ষেপের সমালোচনাও করেছেন সমালোচকরা। সোমবার (২ জুন) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি, এপি এবং সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে।
বিশ্বের একমাত্র দেশ হিসেবে রোববার মেক্সিকোতে জনগণের সরাসরি ভোটে বিচারপতি ও ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যদিও সরকার এই উদ্যোগকে দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারব্যবস্থা সংস্কারের পথ হিসেবে দেখছে, তবে সমালোচকরা একে বিচার বিভাগের রাজনৈতিকীকরণ ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলে আখ্যা দিচ্ছেন।
নতুন প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, এই নির্বাচন পুরোনো, অদক্ষ ও সুবিধাভোগী বিচারব্যবস্থা ভাঙার অংশ। তার মতে, “যারা বিচারব্যবস্থার ভেতরের দুর্নীতির রীতি ধরে রাখতে চায়, তারাই বলছে ভোটে কারচুপি হচ্ছে কিংবা একটি নির্দিষ্ট দল সুপ্রিম কোর্ট দখল করতে চাইছে। কিন্তু বাস্তবতা তার উল্টো।”
এই পরিকল্পনার নেপথ্যে ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদোর, যিনি শেইনবাউমের রাজনৈতিক মেন্টর। অন্যদিকে, রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয় হাজারো মানুষ। তাদের স্লোগান ছিল: “আমাদের গণতন্ত্রে হস্তক্ষেপ চলবে না”, “ভোট জালিয়াতি চলবে না”। ৫৮ বছর বয়সী ইসমায়েল নভেলা ফ্রান্সের সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন, “এটাই ছিল নির্বাহী বিভাগের বিরুদ্ধে শেষ প্রতিবন্ধকতা। সেটাও এখন হারাচ্ছি।”
ডয়চে ভেলে বলছে, এই নির্বাচনে ৮৮০ জন ফেডারেল বিচারক — তার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরাও ছিলেন — পাশাপাশি শত শত স্থানীয় বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচন করা হয়েছে। ২০২৭ সালে বাকি পদগুলোর জন্য দ্বিতীয় দফার ভোট হবে। তবে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। কারণ অনেকেই প্রার্থীদের নাম বা পটভূমি সম্পর্কে জানতেন না। ৬৩ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিকা লুসিয়া কালদেরন বলেন, “আমরা ঠিকমতো প্রস্তুত না। আরও তথ্য প্রয়োজন ছিল।”
আবার অনেকেই ভোট দিতে বাধ্য বোধ করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, বিচারব্যবস্থার ওপর তারা আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। রাউল বেরনাল নামে কারখানার এক কর্মী বলেন, “ভোট দিতে আমার আগ্রহ নেই। দলগুলো আসে, যায়—সবই একই রকম।”
এদিকে মানবাধিকার সংগঠন ডিফেন্সরক্স জানিয়েছে, প্রায় ২০ জন প্রার্থীকে “উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ” হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সিলভিয়া ডেলগাদো নামে এক প্রার্থীও রয়েছেন যিনি মাদক সম্রাট “এল চ্যাপো” গুজম্যানের আইনজীবী ছিলেন।