প্রসাদ বন্ধ। ছোঁয়া যাবে না প্রতিমা, ধর্মগ্রন্থ। মন্দিরে চরণামৃতও বন্ধ। মন্দিরে শুধু দর্শন কর যাবে। মসজিদে নমাজ পড়া যাবে, গির্জায় উপাসনা করা যাবে। ঢোকার মুখে গায়ের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে দেখা হবে। হাতে স্যানিটাইজার দেওয়া হবে। এই বিধিনিষেধ নিয়েই সোমবার থেকে ভারতজুড়ে খুলে গেল ধর্মস্থানের দরজা। গত ২৪ মার্চ যা বন্ধ হয়েছিল।
তা সত্ত্বেও সোমবার সকাল থেকেই ধর্মস্থানে ভিড়। তবে নিয়ম মেনে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ভক্তরা মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বার, গির্জায় ঢুকেছেন। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ গোরক্ষপুরের গোরক্ষনাথ মন্দিরে পুজো করেন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি এই মন্দিরের মহন্ত ছিলেন।
শুধু ধর্মস্থান নয়, খুলছে শপিং মলও। সেখানেও নিয়ম একই। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাতে স্যানিটাইজার নিয়ে, মাস্ক পরে সেখানে ঢোকা যাবে।
তবে এমন একটা সময় আনলকডাউন শুরু হলো, যখন দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। মুম্বই ও দিল্লির অবস্থা সব চেয়ে খারাপ। আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে চীনকে ছাড়িয়ে গিয়েছে মহারাষ্ট্র। সেখানে প্রায় ৮৬ হাজার জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দিল্লিতে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ৩০০ জন করে আক্রান্ত হচ্ছেন।
এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ঘোষণা করেছেন, রাজ্য সরকারি হাসপাতালে কেবলমাত্র দিল্লির লোকেদেরই চিকিৎসা হবে। আধার কার্ড সহ প্রমাণপত্র দেখিয়ে তবে এই সব হাসপাতালে ভর্তি হওয়া যাবে। দিল্লির হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার অব্যবস্থা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠার পর কেজরিওয়াল এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ভারতে এই প্রথম কোনও রাজ্য এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিলো। কেজরিওয়ালের যুক্তি, দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতালে এবং বেসরকারি হাসপাতালে সব রাজ্যের রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে ও হবে। শুধু রাজ্য সরকারের হাসপাতাল দিল্লিবাসীদের জন্য রাখা হয়েছে। কারণ, দেখা গিয়েছে, সেখানে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ রোগী বাইরের রাজ্যের। তাই দিল্লির লোকেরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
এরই মধ্যে এইমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া বলেছেন, ”দিল্লিতে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে। আর দিল্লি সহ ভারতে করোনা এখনও শীর্ষে যায়নি। আগামী এক-দুই মাসে তা আরও বাড়তে পারে।”
আসলে লকডাউনের মধ্যে থেকেই যদি করোনার এতটা বাড়বাড়ন্ত হয়, তখন আনলকডাউনে যে তা আরও অনেকটাইবাড়বে, তা অনুমেয়। হচ্ছেও তাই। লকডাউন শিথিল করার পর থেকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রচুর বেড়েছে। বড় শহরের হাসপাতালে কোনও জায়গা নেই।
পুলিশ, চিকিৎসক, সাংবাদিক, সরকারি কর্মীরা আরও বেশি করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। মহারাষ্ট্রে তিন হাজার পুলিশ করোনায় আক্রান্ত। কলকাতায় করোনায় একজন পুলিশ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। হায়দরাবাদে মারা গিয়েছেন এক সাংবাদিক। দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদ, চেন্নাইয়ে প্রচুর সাংবাদিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
দিল্লিতে করোনা নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন পরিচালনা করতেন পিআইবির ডিজি জি এস ধাতওয়ালা। তিনি করোনায় আক্রান্ত। সম্প্রতি তিনি প্রকাশ জাভড়েকর ও নরেন্দ্র তোমরের সাংবাদিক সম্মেলনও পরিচালনা করেছেন। দিল্লির বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে থাকা আইএএস অফিসার করোনায় আক্রান্ত। দিল্লিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের পাঁচজন অফিসার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারপর ইডির অফিস দুই দিনের জন্য সিল করে দেওয়া হয়েছিল।
তারপরেও লকডাউন তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। এতে করে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে সরকারের যুক্তি, অর্থনীতির স্বার্থে, লোকেদের কাজ পাওয়ার স্বার্থে এটা জরুরি। একটাই আশার কথা, করোনায় সুস্থ হওয়ার হার ৪৮ শতাংশের বেশি। সূত্র: ডয়েচে ভেলে