২০২২ সালের প্রথম দিনে প্রথম বারের মতো নতুন ঠিকানা ঢাকার অদূরে পূর্বাচলে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী ২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা।
শনিবার (০১ জানুয়ারি) বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এবারে মেলা দেখতে শেরে বাংলা নগরের পুরোনো ঠিকানা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে বাণিজ্য মেলার নতুন ও স্থায়ী ঠিকানা রাজউকের নতুন শহর পূর্বাচলে ২০ একর জমির ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে যেতে হবে। রূপগঞ্জ ও কালিগঞ্জ উপজেলায় গড়ে উঠছে পূর্বাচল উপশহর। পূর্বাচলের কাঞ্চন ব্রিজের কাছে ৪ নম্বর সেক্টরে নির্মাণ করা হয়েছে ঢাকা বাণিজ্য মেলার স্থায়ী এ প্রদর্শনী কেন্দ্র।
প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে মেলা চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের জন্য রাত ১০টা পর্যন্ত মেলার দ্বার উন্মুক্ত থাকবে। আগের মতো এবারও মেলায় প্রবেশের টিকেটের দাম শিশুদের জন্য ২০ টাকা আর বড়দের জন্য ৪০ টাকা।
এছাড়া এবারই প্রথম দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য থাকছে শাটল সার্ভিস। কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে মাসজুড়ে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে ১৫টি করে মোট ৩০টি বাস চলাচল করবে।
মেলায় অংশ নিয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ভারত, চীন, তুরস্ক, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশের কোম্পানি।
করোনা মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের সক্ষমতার চেয়ে অনেক কম সংখ্যক স্টল-প্যাভিলিয়ন বসানো হয়েছে। এবারের ছোটবড় মিলিয়ে ২২৫টি স্টল-প্যাভিলিয়ন দিয়ে সাজানো হয়েছে। এর আগে ঢাকার শেরে বাংলা নগরে আয়োজিত মেলায় ২০১৯ সালে ৫৫০টি এবং ২০২০ সালে ৪৫০টি স্টল-প্যাভিলিয়ন বসেছিল। করোনা মহামারির কারণে ২০২১ সালে মেলা বসেনি।
এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মাথায় রেখে সাজানো হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণ। বাণিজ্য মেলার গেটের থিমে প্রাধান্য পেয়েছে ১০ মেগা প্রকল্প।
মিলনায়তনের ভেতরে ও সামনের প্রচুর ফাঁকা জায়গা থাকায় দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। এবারও প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন, জেনারেল স্টল, ফুডকোড, মিনি স্টল, প্রিমিয়ার স্টলসহ ৩২টি ক্যাটাগরির স্টল-প্যাভিলিয়ন রয়েছে। মিলনায়তনের ভেতরে নিজস্ব একটা ক্যাফেটরিয়া রয়েছে। সেখানে একসঙ্গে ৫০০ লোক বসে খাবার খেতে পারবের। এছাড়া আরো ১২-১৩টি খাবার স্টল রয়েছে।
নতুন মেলাকেন্দ্রে বৃহৎ পরিসরে পার্কিং সুবিধা রয়েছে। দোতলা পার্কিং বিল্ডিংয়ের মোট পার্কিং স্পেস সাত হাজার ৯১২ বর্গমিটার, যেখানে ৫০০টি গাড়ি রাখা যাবে।
তবে মেলার শৃঙ্খলা রক্ষায় গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য কেন্দ্রের পাশেই রাজউকের পানির প্ল্যান্ট ভাড়া নেওয়া হয়েছে। সেখানে এক হাজার গাড়ি পার্কিং হবে। এছাড়া এক্সিবিশন বিল্ডিংয়ের সামনের খোলা জায়গায় আরও এক হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের সুযোগ রয়েছে।
পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৭৭৩ কোটি টাকা। যার মধ্যে চীনের অনুদান ৫২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, বাংলাদেশ সরকারের ২৩১ কোটি টাকা ও ইপিবি নিজস্ব তহবিল থেকে ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা অর্থায়ন করেছে।
এক্সিবিশন সেন্টারে তৈরি করা ফ্লোরের আয়তন ৩৩ হাজার বর্গমিটার, বিল্ডিংয়ের ফ্লোরের আয়তন ২৪ হাজার ৩৭০ বর্গমিটার ও এক্সিবিশন হলের আয়তন ১৫ হাজার ৪১৮ বর্গমিটার। এক্সিবিশন হলে ৮০০টি বুথ রয়েছে। প্রতিটি বুথের আয়তন নয় দশমিক ৬৭ বর্গমিটার।
এছাড়াও রয়েছে ৪৭৩ আসনবিশিষ্ট একটি মাল্টি-ফাংশনাল মিলনায়তন, ৫০ আসনবিশিষ্ট একটি কনফারেন্স রুম, ছয়টি মিটিং রুম, শিশুদের খেলার স্পেস, নামাজের কক্ষ, দুটি অফিস রুম, মেডিক্যাল রুম, ডরমেটরি-গেস্ট রুম, ১৩৯টি টয়লেট, বিল্ট ইন পাবলিক এড্রেস সিস্টেম, নিজস্ব ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, স্টোর রুম, সিসিটিভি কন্ট্রোল রুম, অটোমেটেড সেন্ট্রাল এসি সিস্টেম ও ইনবিল্ট ইন্টারনেট।