শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে হেফাজতে ইসলামের দেওয়া বিবৃতি দৃষ্টিগোচর হয়েছে জানিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, বিবৃতিতে আনা অভিযোগসমূহ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিভ্রান্তিকর।
নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, বিবৃতিতে নতুন কারিকুলামে ইসলাম শিক্ষা বাধ্যতামূলকের পরিবর্তে ঐচ্ছিক করার কথা ওনারা শুনেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা আইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার দাবি করেছেন তারা, একই সঙ্গে পাঠ্যক্রম প্রণয়নে আলেম ওলামাদের সম্পৃক্ত করার দাবিও করেছেন তারা।
তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি ইতিমধ্যেই পরিষ্কার করে বলেছেন, ধর্ম শিক্ষা আবশ্যিকভাবেই নতুন পাঠ্যক্রমে/কারিকুলামে থাকছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে একটি কথা এখানে বলা প্রয়োজন, হেফাজত নেতৃবৃন্দ এমন এক বিষয় নিয়ে মন্তব্য করেছেন যা ওনাদের নেতৃবৃন্দের বেশিরভাগের পরিচালিত কওমি মাদ্রাসাগুলোতে পড়ানো হয় না, সেটি হচ্ছে আলিয়া মাদ্রাসাসমূহের জন্য প্রযোজ্য সরকার প্রণীত জাতীয় পাঠ্যক্রম। বর্তমানে কওমি মাদ্রাসাসমূহ আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষা, সাধারণ শিক্ষা, বা কারিগরি শিক্ষার পাঠ্যক্রম, কোনোটাই অনুসরণ করে না। যেই পাঠ্যক্রম ওনারা অনুসরণই করেন না, তা পরিবর্তন করার বিষয়ে কেন এবং কীভাবে মতামত দেবেন? আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষাক্রম বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদদের দ্বারা করা হয়েছে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, নতুন কারিকুলামের সাধারণ, মাদ্রাসা, কারিগরি সকল পর্যায়ে, কী প্রক্রিয়ায় ইসলাম ধর্ম বই এবং পাঠ্যক্রম পড়ানো হবে তা আমাদের দেশের আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত দ্বীনি আলেম, ইসলামি চিন্তাবিদদের সাথে আলোচনা করেই নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ও অন্যান্য ইসলামি উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা করেই পাঠ্যক্রম হয়েছে।
আলিয়া মাদ্রাসাসমূহে পাঠদান করার জন্য ধর্মীয় বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে প্রণীত পাঠ্য, পাশাপাশি সাধারণ বিষয়সমূহের পাঠ্যবই আমাদের আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যেই পড়ছে। তাদের অনেকেই দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে শুরু করে মেডিকেল, নার্সিং, ইঞ্জিনিয়ারিং সকল পর্যায়েই উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছে, এবং বিদেশেও পড়াশোনা করছে। সরকার প্রণীত পাঠ্যক্রম অনুসারে দাখিল-আলিম-ফাজিল-কামিলে প্রচলিত পাঠ্যক্রম যদি কওমি মাদ্রাসাগুলো অনুসরণ করতে চায়, আমরা অবশ্যই ওনাদের সাথে আলোচনা করব।
দেশের সকল নাগরিকদের সঙ্গে, বিশেষ করে শিক্ষাবিদ, পাঠ্যক্রম বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক, ইসলামি ও অন্যান্য ধর্মীয় চিন্তাবিদ, সকলের মতামত নিয়েই, সকলের সাথে আলোচনা করেই পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা হয় এবং হচ্ছে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, উন্মুক্ত মতামত দেওয়ার প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে। এখন হঠাৎ কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয় ছাড়া সম্পৃক্ত হওয়ার দাবি জানানো গ্রহণযোগ্য নয়। বিবৃতি প্রদানকারীরা অবশ্যই জানেন, বাংলাদেশের সংবিধান মতে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক। আমাদের প্রত্যাশা, দেশের সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে কওমি মাদ্রাসাগুলো অন্তত প্রাথমিক পর্যায়ে আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষার এবতেদায়ি পর্যায়ের পাঠ্যক্রম যেন অনুসরণ করে। সরকার দাওরায়ে হাদিসকে ২০১৮ সালের ৪৮ নং আইন দ্বারা ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্সের মর্যাদা দিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা যদি প্রাথমিক শিক্ষা ধাপের ন্যূনতম শিখনফল ও দক্ষতা অর্জন করতে না পারে, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের প্রতি অবিচার করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আমরা আশা করবো হেফাজতে ইসলাম, কওমী মাদ্রাসা সমূহে বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষায় প্রচলিত পাঠ্যক্রম, যা নতুন কারিকুলামের মাধ্যমে আরো বেশি সমৃদ্ধ হতে যাচ্ছে, সেই পাঠ্যক্রম যেনো প্রচলনের উদ্যোগ নেন। সেটি না করে “শোনা যাচ্ছে” মর্মে অভিযোগ করা একটি ষড়যন্ত্রমূলক কাজ।
আমরা বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সবাই কে সাথে নিয়ে কাজ করছি। বিবৃতি প্রদানকারী সংগঠনের সাথেও আমরা আলোচনা করতে পারি, কিন্তু আমাদের পাঠ্যক্রম অনুসরণ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত উনাদের নিতে হবে। অনুসরণই যদি না করা হয় সেটি নিয়ে আলোচনা করার কোনো যৌক্তিকতাই নেই।