দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের সব রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ সুপার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ বার্তা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। এই কমিশনার তার দায়িত্বাধীন এ দুই বিভাগের নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) পাঠানো বার্তাটিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ ও একমাত্র বার্তা বলে উল্লেখ করেন।
জানা গেছে, অন্য বিভাগগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনাররাও অনুরূপ বার্তা পাঠাতে পারেন বলে জানা গেছে।
বার্তায় রাশেদা সুলতানা যা বলেছেন—
১. সকল প্রার্থীকে সমান গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। যে কোনও মূল্যে অবাধ, সুষ্ঠু, পরিচ্ছন্ন ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হবে। এ জন্য তাৎক্ষণিকভাবে যেখানে যা করণীয়, তা করতে হবে; যে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন, তা নিশ্চিত করতে হবে; সামর্থ্যের সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। কোনও সময়ক্ষেপণ করা যাবে না। সর্বোপরি ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেরকম শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
২. সকল প্রার্থীর এজেন্টকে ভোটকক্ষে উপস্থিত হয়ে দায়িত্ব পালনের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও প্রয়োগকারী সকল সংস্থার সমন্বয়ে এমন পরিবেশ সৃষ্টি ও নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভোটাররা মনে করেন যে— প্রশাসন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে এবং ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
৩. ভোটকেন্দ্রের শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হলে সাময়িকভাবে ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখতে হবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে ভোটকেন্দ্রের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। ভোটগ্রহণকালে উদ্ভূত যে কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি বা সৃষ্ট বাধা-বিপত্তি বা বিভিন্ন অপচেষ্টা বা চ্যালেঞ্জ নিয়ন্ত্রণের আওতার বাইরে চলে গেলে ভোটগ্রহণ বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে যত সংখ্যক কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করা প্রয়োজন তত সংখ্যক কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করতে হবে। ভোটগ্রহণ বন্ধের বিষয়টি ও সার্বিক কেন্দ্র পরিস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে কমিশনকে অবহিত করতে হবে।
৪. কোনও কেন্দ্রে জালভোট, প্রক্সিভোট, ব্যালট বাক্স ছিনতাই…. ইত্যাদি হলে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের গৃহীত ভোট গণনায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫. পক্ষপাতমূলক আচরণ বা কার্যকলাপ বা ভূমিকা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। এরূপ আচরণ প্রমাণিত হলে তার দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের উপর বর্তাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে বহন করতে হবে। কোনও প্রার্থী আচরণবিধি ভঙ্গ বা নির্বাচনি অপরাধ করলে তাৎক্ষণিকভাবে উপযুক্ত ও কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬. অনিয়মের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের অভিযোগ উত্থাপিত হলে কমিশন সে ভোটের ফলাফল গেজেট না করে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করবে। তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হলে কমিশন কর্তৃক ওই ভোট বাতিল করা হবে। সেক্ষেত্রে কমিশন পুনরায় ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করবে এবং দায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৭. কোনও গুজবে দ্বিধাগ্রস্ত হবেন না। যদি কোন গুজব বা বার্তা বা সংবাদ আপনাদের নিকট গুরুত্বারোপযোগ্য মনে হয়, সেক্ষেত্রে দ্বিধাহীন চিত্তে ও নিঃসংকোচে আমাকে সরাসরি ফোন করবেন। প্রয়োজনে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ প্রদান করবেন।
৮. মনে রাখতে হবে “শেষ মুহূর্তের মেসেজ”, “আগের রাতের মেসেজ”, “চূড়ান্ত মেসেজ”…. ইত্যাদি বলতে কিছু নেই। এই মেসেজ-ই সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য একমাত্র ও চূড়ান্ত মেসেজ। অন্য বা ভিন্ন কোনও মেসেজ আমলে নেবেন না।
৯. সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ সুপার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার এবং তাদের অধীন কর্মকর্তাদেরকে উপরে উল্লেখিত বার্তা ফরোয়ার্ড করাসহ নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের অনুরোধ করা হলো।
১০. আমি আশা করি, আপনারা আপনাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সমর্থ হবেন। মহান আল্লাহ/সৃষ্টিকর্তা আপনাদের সবাইকে সুস্থ রাখুন এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে তাওফিক দান করুন। মহান আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন।