বাসা ভাড়া নেয়ার কথা বলে একজন উঠতেন ওপরে। নিচে পাহারায় থাকতেন দুই থেকে তিনজন। কোনো ফ্ল্যাটে তালা দেখলেই জানিয়ে দিতেন নিচে থাকা লোকদের। মাত্র ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যেই তারা চুরি করে পালিয়ে যেতেন ঐ ফ্ল্যাট থেকে। নিজেদের চেহারা ঢাকতে চক্রটি ব্যবহার করত চাদর।
রাজধানীর কেরানীগঞ্জের একাধিক বাড়িতে চুরির ঘটনায় জড়িত ‘নানা বাহিনীর’ ছয়জনকে গ্রেফতারের পর পুলিশ বলছে, জুয়া আর মাদকের টাকা জোগাড় করতেই মূলত চুরি করতেন তারা।
সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, কেরানীগঞ্জের একটি বাড়িতে চুরি করতে ঢুকেন দুইজন। সিসি ক্যামেরায় তাদের উপস্থিতি ধরা পড়লেও চেনার উপায় নেই। কারণ সাদা কাপড়ে মুখ ঢাকা। এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে খুব সচেতনভাবে তাদের উঁকিঝুকি।
তারা যখন চুরি করতে ব্যস্ত, বাসার নিচে তখন পাহারায় কয়েকজন। তালা লাগানো ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে চুরি করতে দক্ষ এই দলটি কেরানীগঞ্জের একাধিক বাড়িতে গেল কয়েক মাসে চুরি করেছে— এমন অভিযোগ ছিল পুলিশের কাছে।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে চোর চক্রটি শনাক্ত করার পর গ্রেফতার করা হয়েছে ছয়জনকে। এই দলের মূল নেতা হাসান। সবাই তাকে নানা বলে ডাকেন। বিভিন্ন ফ্ল্যাটে বাসা ভাড়া নেয়ার নামে তিনি মূলত রেকির কাজ করতেন। সিগনাল পেলে টার্গেট ফ্ল্যাটে ঢুকতেন বাকি সদস্যরা।
পুলিশ বলছে, এই চক্রটি বেশ কৌশলী। নিজেদেরকে সিসি ক্যামেরা থেকে বাঁচাতে তারা মুখ ঢেকে রাখেন চাদর দিয়ে। সবাই জুয়ারি ও মাদকাসক্ত।
কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাব উদ্দিন কবির বলেন, তাদের গ্রুপে হাসান নামে একজন বয়স্ক নানা আছেন। তিনি বিভিন্ন খালি ফ্ল্যাট খুঁজতেন। বিভিন্ন ভবনে গিয়ে কোনো ফ্ল্যাটে তালা দেখলে তার চক্রের সদস্যেরকে তিনি বিষয়টি জানাতেন। তখন নিচে থাকা বাকিরা দ্রুত সেখানে গিয়ে তালা ভেঙে চুরি করতেন। তারা নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করতেন। এ কাজটা তারা আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে করে ফেলতেন।
অতিরিক্ত পুলিশ আরো বলেন, গ্রেফতাররা দুটি নেশায় আসক্ত। একটা হচ্ছে মাদকের নেশা, আরেকটা হচ্ছে জুয়ার নেশা। এই নেশার টাকা জোগাড় করতেই তারা চুরি করতেন। তারা সঙ্গে করে বড় একটা চাদর বা কাপড় নিয়ে যেতেন। সেটা দিয়ে নিজেদেরকে ঢেকে রাখতেন, যাতে কোনোভাবেই সিসি ক্যামেরায় তাদের চেহারা দেখা না যায়।
বয়স বেশি হলেও নানা বাহিনীর সদস্যরা চুরির বাইরে বিভিন্ন রকমের কিশোর অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।