পবিত্র আশুরা উপলক্ষে ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে রাজধানীতে তাজিয়া মিছিল করেছে শিয়া সম্প্রদায়। মিছিলটি বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ধানমন্ডিতে গিয়ে শেষ হয়। বুধবার (১৭ জুলাই) সকাল ১০টায় পুরান ঢাকার হোসেনি দালান থেকে মিছিল শুরু হয়। এই মিছিলে অংশ নিয়েছেন শিয়া সম্প্রদায়ের হাজারো মানুষ। দুপুরে ধানমন্ডি ২ নম্বর সড়কে গিয়ে শেষ হয় তাজিয়া মিছিল।
ইসলামের ইতিহাসে মহররম মাসের ১০ তারিখ বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন দিন। দিনটি আশুরা হিসেবে পালন করে বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়। কারবালার বিয়োগান্তক স্মৃতি স্মরণে শোকের আবহে পালিত হয় পবিত্র আশুরা। পুরান ঢাকার হোসেনি দালান থেকে খালি পায়ে, বুক চাপড়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ মাতম তুলে মিছিলটি লালবাগ, আজিমপুর, নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত ঘুরে, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় হয়ে ধানমন্ডির দিকে এগিয়ে যায়। পরে ধানমন্ডি লেকের পাড়ে প্রতীকী ‘কারবালা’ প্রান্তে গিয়ে শেষ হয় শোকের মিছিল।
শোকের মিছিলে অংশগ্রহণের জন্য পরনে কালো পোশাক, মাথায় কালো পট্টি, কারও হাতে আবার ঝালর দেওয়া লাল-কালো ও সোনালি রংঙের ঝাণ্ডা দেখা গেছে। তাজিয়া মিছিলে কারবালার স্মরণে কালো মখমলের চাঁদোয়ার নিচে বহন করা হয় ইমাম হোসেনের (রা.) প্রতীকী কফিন। মিছিলের সামনে ছিল ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেনের দুটি প্রতীকী ঘোড়াও।
মিছিল শেষে ভক্তরা যে যার মত চলে যাবেন এবং অভ্যন্তরীণভাবে রওজাগুলোতে অনুষ্ঠান হবে। এছাড়া সন্ধ্যায় হোসেনি দালানে শামে গরিবার মজলিশ ও বয়ান হবে। এছাড়া আজ থেকে ঠিক ৪০ দিন পর ইমাম হোসেনের চল্লিশা অনুষ্ঠান হবে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে। মিছিলের মূল আয়োজন করে হোসেনি দালান ইমামবাড়া ব্যবস্থাপনা কমিটি। মিছিলে অংশ নেয় বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ভক্তরা। শিয়া মুসলমানদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ এই তাজিয়া মিছিলে অংশ নেয়।
এদিকে তাজিয়া মিছিল ঘিরে সকাল থেকে হোসেনি দালান এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা জোরদার করতে দেখা যায়। পুলিশ নির্দেশনা অনুযায়ী, এবারও এই শোকের মিছিলে লাঠি, বর্শা, ছুরি, বল্লম, তলোয়ারের মত ধারালো অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ ছিল।
যেকোনও ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে মিছিলের সামনে ও পেছনে দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সদস্যরা। এছাড়া ছিল র্যাব ও বিভিন্ন স্তরের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও।
২০১৫ সালে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির মধ্যে ইমামবাড়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনার পর থেকে আশুরায় নিরাপত্তার কড়াকড়ি বাড়ানো হয়। কোভিড মহামারির কারণে বাংলাদেশে দুই বছর বন্ধ থাকার পর ২০২১ সাল থেকে তাজিয়া মিছিল করার অনুমতি পায় শিয়া সম্প্রদায়।