আজ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্ন শুভ মহালয়া। কৈলাসশিখর থেকে তার আগমনিবার্তায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে উৎসবের রোশনাই। সনাতন ধর্মে বিশ্বাস, আজ দশভুজা শক্তিরূপে দুর্গা মণ্ডপে মণ্ডপে অধিষ্ঠান করবেন। মহালয়ার দিন পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে, মাতৃপক্ষ শুরু হয়। সেদিনই আক্ষরিক অর্থে দুর্গাপূজার সূচনা হয়। শারদীয় দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো এই মহালয়া।
কথিত আছে মহালয়ার দিন অসুর ও দেবতাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। এই মহালয়ার গুরুত্ব সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে অনেক। মহালয়ার দিন পিতৃ পুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করার রীতি প্রচালিত আছে। এদিনই দেবীর দুর্গার চক্ষুদান হয়। মহালয়া শব্দটির অর্থ, মহান আলয় বা আশ্রম। এ ক্ষেত্রে দেবী দুর্গাই হলেন, সেই মহান আলয়। পুরাণ মতে, ব্রহ্মার বরে মহিষাসুর অমর হয়ে উঠেছিলেন। শুধুমাত্র কোনো নারীশক্তির কাছে তার পরাজয় নিশ্চিত। অসুরদের অত্যাচারে যখন দেবতারা অতিষ্ঠ, তখন ত্রিশক্তি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর নারীশক্তির সৃষ্টি করেন। তিনিই মহামায়ারূপী দেবী দুর্গা। দেবতাদের দেওয়া অস্ত্র দিয়ে মহিষাসুরকে বধ করেন দুর্গা। এই জন্যই বিশ্বাস করা হয় যে, এই উৎসব খারাপ শক্তির বিনাশ করে শুভশক্তির বিজয়।
বুধবার (২ অক্টোবর) শেফালিঝরা শারদ প্রভাতে জলদকণ্ঠে চণ্ডীপাঠ আর পিতৃপক্ষের তর্পণের সমাপন ঘটবে। আর এই চণ্ডীতেই আছে দেবী দুর্গার সৃষ্টির বর্ণনা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন, শরতের আকাশে-বাতাসে এখন যেন মন্দ্রিত হচ্ছে ‘রূপংদেহি, জয়ংদেহি, যশোদেহি, দ্বিষোজহি’র সুরলহরি। আজ ঘনঘটার অমাবস্যা তিথিতে প্রাণে দ্যোতনা তুলে ঢাকে পড়বে কাঠি। দুর্গোত্সবের তিন পর্ব যথা: মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা। মহালয়ায় পিতৃপক্ষ সাঙ্গ করে দেবীপক্ষের দিকে যাত্রা হয় শুরু।
আগামী ৮ অক্টোবর সায়ংকালে অকালবোধনে খুলে যাবে মা দুর্গার শান্ত-স্নিগ্ধ অতল গভীর আয়ত চোখের পলক। ধূপের ধোঁয়ায় ঢাক-ঢোলক, কাঁসর-মন্দিরার চারপাশ কাঁপানো নিনাদ আর পুরোহিতের ভক্তিকণ্ঠে :‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা-নমস্তৈস্য নমস্তৈস্য নমো নম..’ মন্ত্রোচ্চারণের ভেতর দূর কৈলাস ছেড়ে দেবী পিতৃগৃহে আসবেন দোলায়। ১২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে ফিরবেন ঘোটকে। দক্ষিণ এশিয়ায় এই পূজাকে শরৎকালের বার্ষিক মহা উৎসব হিসেবে ধরা হয় বলে এটাকে শারদীয় উৎসবও বলা হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদদের প্রিয় পূজা-শারদীয়া। কলকাতা, হুগলী, শিলিগুড়ি, কুচবিহার, লতাগুড়ি, বাহারাপুর, জলপাইগুড়ি এবং ভারতের অন্যান্য অঞ্চল যেমন, আসাম, বিহার, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গোয়া, গুজরাট, পাঞ্জাব, কাশ্মীর, অন্ধ্র প্রদেশ, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, কেরালায় ঘটা করে এই উৎসব পালন করা হয়। নেপালে ও ভুটানেও স্থানীয় রীতিনীতি অনুসারে প্রধান উৎসব হিসেবে পালন করা হয়। বাংলাদেশেও ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই উৎসব পালন করা হয়।
এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, এ বছর সারা দেশে দুর্গাপূজায় মণ্ডপের সম্ভাব্য সংখ্যা ৩২ হাজার ৬৬৬টি। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৫৭টি ও উত্তর সিটিতে ৮৮টি মণ্ডপ হবে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে পূজামণ্ডপের যে সংখ্যা বলা হচ্ছে তা সরকারি বা পূজা উদযাপন পরিষদের তালিকা নয়। এটি একটি সম্ভাব্য তালিকা। গত বছর মোট পূজামণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৩৩ হাজার ৪৩১।
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, দুর্গাপূজায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে অসচ্ছল মণ্ডপগুলোতে এই টাকা বিতরণ করা হবে। প্রতি পূজামণ্ডপের জন্য ৫০০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হতো। আমার মন্ত্রণালয় থেকে এটা ২০০ কেজি পর্যন্ত বাড়ানো সুপারিশ করেছি।