অবিলম্বে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার জামিন বাতিল করে রানাপ্লাজা হত্যাকাণ্ডে দায়ীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন।
আজ (বুধবার) সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি আহসান হাবিব বুলবুল এবং সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ভবন নির্মাণের নিয়মাবলী না মেনে প্রভাব খাটিয়ে ডোবা জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছিল সোহেল রানা। নিয়মবহির্ভূতভাবে নির্মিত ভবনে ফাটল দেখা দিলেও ওই ভবনে স্থাপিত গার্মেন্টস মালিকদের সাথে জোট বেঁধে শ্রমিকদের ভয় দেখিয়ে ফাটল ধরা ভবনেই কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেছিল। এটা প্রমাণ করে যে, রানাপ্লাজার মালিক সোহেল রানা সরাসরি হাজার হাজার শ্রমিককে ইচ্ছাকৃতভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন। সহস্রাধিক মৃত্যু, তিন সহস্রাধিক পঙ্গু আর শতশত শ্রমিক নিখোঁজ হওয়ার মতো জঘন্য ঘটনার প্রায় ১ যুগ অতিক্রান্ত হতে চললেও এক সোহেল রানা ছাড়া দায়ীদের আর কেউ কারাগরে নেই। যুবলীগ নেতা সোহেল রানা এবং দুর্নীতিগ্রস্ত গার্মেন্টস মালিক আর সরকারি কর্মকর্তাদের ১২ বছরেও নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন করা যায়নি। বিচারহীনতার এই দৃষ্টান্তের কারণে কারখানা মালিকরা আজও শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করতে যথেষ্ট উদ্যোগী হয়নি।
জুলাই আন্দোলনে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার উচ্ছেদ হওয়ার পর শ্রমিকরা যখন নিপীড়নমুক্ত নিরাপদ কর্মক্ষেত্র, মালিকের মুনাফালিপ্সা আর অবহেলাজনিত কারণে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের জীবনহানীতে ন্যায্য বিচার ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছে, সেই সময় নির্মম শ্রমিক হত্যার জন্য প্রধান দায়ী ব্যক্তিকে ফাঁসিতে না ঝুলিয়ে জামিন দেওয়া জুলাই আন্দোলনের মূল চেতনার বিরোধী।
কোন আইন কর্মকর্তার দুর্বলতা বা দায়িত্বে অবহেলার কারণে সোহেল রানার জামিন মঞ্জুর হয়েছে তা তদন্তের দাবি জানানো হয়।
অবিলম্বে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে রানাপ্লাজা, তাজরিন হত্যাকাণ্ডের বিচার কাজ শেষ করতে হবে। যুবলীগ নেতা সোহেল রানা, মৎসজীবী লীগ নেতা দেলোয়ারসহ রানাপ্লাজা, তাজরিন হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় এই সরকারও ফ্যাসিস্ট সরকারেরই উত্তরসূরী হিসাবে চিহ্নিত হবে এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি অব্যাহত রাখার দায় বহন করতে হবে। শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে সব ধরনের শক্তি প্রয়োগ বন্ধ করে কার্যকর আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। গার্মেন্টস মালিকরুপী প্রতারক, তাদের পালিত ঝুট সন্ত্রসী এবং ইউনিয়ন দালালদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। শ্রমিক হত্যার বিচার এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
সোহেল রানার জামিন বাতিল এবং বিচার তরান্বিত করা, শ্রমিক হত্যার বিচার এবং শ্রম প্রশাসনের আমূল সংস্কারের দাবিতে ৪ অক্টোবর বিকেলে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট।