নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী পৌরসভায় নাইম হোসেন নামে এক যুবক ফেসবুকে একটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ছবি পোস্ট করেন। তারপর তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে তাকে গ্রেপ্তার করলে বেরিয়ে আসে পুলিশ সদস্য হত্যার ভয়ংকর তথ্য। উদ্ধার করা হয় পুলিশ সদস্যের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন।
শনিবার (১২ অক্টোবর) সকালে নিজ সম্মেলন কক্ষে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আব্দুল্লাহ-আল-ফারুক এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন, সোনাইমুড়ী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের পাপুয়া গ্রামের ছিদ্দিকের ছেলে নাইম হোসেন (২১), ১নং ওয়ার্ডের কৌশল্যারবাগ গ্রামের মৃত শফিকুল ইসলামের ছেলে নাহিদুল ইসলাম (১৬) ও জয়াগ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ভাওরকোট গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে ইমাম হোসেন ইমন (২২)।
জেলা পুলিশ সুপার বলন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দুষ্কৃতকারীরা সোনাইমুড়ী থানায় হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে পুলিশ সদস্য কনস্টেবল ইব্রাহিমকে পিটিয়ে এবং সাব-ইন্সপেক্টর বাছিরকে জবাই করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পাঁচ তারিখ হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় আসামি গ্রেপ্তারে আমরা অভিযান পরিচালনা করছিলাম। এর মাঝে ফেসবুকে আগ্নেয়াস্ত্রেরসহ পোস্ট দেখে আমরা তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। তারা আদালতে পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনা শিকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।
আব্দুল্লাহ-আল-ফারুক আরও বলেন, মূলত আমরা ওই ছবি দেখে ওই পুলিশ সদস্য হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছি। সেটি হলো গ্রেপ্তারকৃত নাইম ফেসবুকে থানা থেকে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রসহ ছবি দেয়। সেই ছবির সূত্র ধরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারপর তার কাছ থেকে নিহত পুলিশ সদস্যের দুইটি স্মার্ট ফোন উদ্ধার করা হয় এবং এ ঘটনায় জড়িত আরও ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সেদিন দুষ্কৃতকারীরা থানায় হামলা চালালে প্রাণ ভয়ে কনস্টেবল মোহাম্মদ ইব্রাহিম পুলিশের সরকারী বরাদ্দকৃত নীল রংয়ের টি শার্ট পরিহিত অবস্থায় সীমানা প্রাচীরের নীচ দিয়ে টিনের বেড়ার ফাঁকে বের হওয়ার সময় গ্রেপ্তারকৃত নাহিদুল ইসলাম তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাধা দিয়ে ‘এইতো পুলিশ’ বলে মারধর শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে আসামি ইমাম হোসেন ইমন দৌড়ে এসে লাঠি দিয়ে স্বজোরে হত্যার উদ্দেশ্যে মোহাম্মদ ইব্রাহিমের মাথার পেছনে ৫/৬টি আঘাত করে। এতে ইব্রাহিম গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তারপর সকলে একযোগে হত্যার উদ্দেশ্যে সারা শরীরে আরও উপর্যুপুরি আঘাত করে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, কনস্টেবল ইব্রাহিমের মৃত্যু নিশ্চিত জেনে আসামি নাইম হোসেন ইব্রাহিমের পকেট থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল, আইডি কার্ড ও টাকা সম্বলিত ম্যানিব্যাগ নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে পুনরায় আসামিরা উপর্যুপুরি আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং তাকে চার হাত পা ধরে ঝুলিয়ে রাস্তায় নিয়ে টেনে হিছড়ে সারা শরীর ক্ষত-বিক্ষত করার মাধ্যমে রেলক্রসিংয়ে কাছাকাছি রেখে উল্লাসে মত্ত হয়। আসামি ইমাম হোসেন মোবাইল ও টাকা ভাগ চাইলে আসামি নাইম হোসেন তাকে পরে যোগাযোগের কথা বলে ইমাম হোসেনের মোবাইল নাম্বারে নিজ নাম্বার হতে কল করে। তদন্তকালে সকল প্রমাণাদির মিল পাওয়া গেছে। এছাড়াও আসামিরা বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
দুষ্কৃতকারীর পরিচয় দুষ্কৃতকারী উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, অপরাধীর পরিচয় অপরাধী। তার অন্য কোনো পরিচয় নেই। ৫ আগস্ট বিজয় মিছিল থেকে অনেক ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সেগুলোর জন্য ছাত্ররা দায়ী নয়। যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তারা দুষ্কৃতকারী। এমন দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মোহাম্মদ ইব্রাহীম, সহকারী পুলিশ সুপার (চাটখিল চার্কেল) নিত্যানন্দ দাস, নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের মঞ্জুসহ জেলায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।