স্বাস্থ্য খাতে আওয়ামী লীগের রেখে যাওয়া ১১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ কমিয়ে অর্ধেক করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এ বরাদ্দ কমানো হয়। সোমবার (৩ মার্চ) রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় আরএডিপি উপস্থাপন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়।
এনইসি সভাশেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ জানান, মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান সরকার উন্নয়ন ব্যয় কমছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। ফলে এখন চূড়ান্ত এডিপির আকার কমে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। আর এডিপিতে সব থেকে বেশি বরাদ্দ কমানো হয়েছে স্বাস্থ্য খাত থেকে। প্রায় রেকর্ড পরিমাণে ব্যয় কমে এখন বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ৫ হাজার ৬৬৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। মূল এডিপিতে স্বাস্থ্যে বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। বর্তমানে সংশোধিত এডিপিতে মোট বরাদ্দের মাত্র ২ দশমিক ৬২ শতাংশ পেয়েছে স্বাস্থ্য খাত।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে এক টাকাও খরচ করতে পারেনি ৮৯ প্রকল্প। অন্যদিকে এক শতাংশও কাজ হয়নি ১২১ প্রকল্পে। স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ কমছে ৫০ শতাংশ। বিদেশি ঋণের বরাদ্দ কমেছে ৮১ হাজার কোটি টাকা।
স্বাস্থ্যসেবায় বরাদ্দ কমানো প্রসঙ্গে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, শিক্ষার অনেক প্রকল্পে দুর্নীতি হচ্ছে তাই বন্ধ করে দিয়েছি। স্বাস্থ্য সেবা খাতেও বরাদ্দ কমানো হয়েছে। এই দুই খাতেই দুর্নীতি হচ্ছে তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি। ফলে অনেক প্রকল্প আমরা বন্ধ করে দিয়েছি।
এনইসি সভা থেকে জানা গেছে, স্বাস্থ্যসেবায় অবকাঠামো খাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা নেই। ফলে মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারত-সিঙ্গাপুরসহ নানা দেশে পাড়ি দিচ্ছে। আরএডিপিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষার জন্য তহবিল বরাদ্দ ১৬ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১২ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা করা হয়েছে। আরএডিপিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্য ১১ হাজার ৩৮৮ কোটি থেকে কমিয়ে ৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।
এদিকে, বিদ্যুৎ বিভাগ চলতি ২০২০-২০৫ অর্থবছরের জন্য এডিপিতে বরাদ্দ ৩৩ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ২১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ১৮ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ১২৯ কোটি টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১০ হাজার ২২৮ কোটি টাকা, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ১০ হাজার ২১১ কোটি টাকা, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ৭ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা এবং সেতু বিভাগ ৫ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা আরএডিপিতে বরাদ্দ পেয়েছে।
পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের জন্য ৪৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা বা ২২.৩৪ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য ৩১ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা, বা ১৪.৭৭ শতাংশ, শিক্ষা খাতের জন্য ২০ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা বা ৯.৪২ শতাংশ এবং গৃহায়ন ও কমিউনিটি সার্ভিসেস খাতের জন্য ১৯ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা বা ৯.১৬ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।