উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের পর আগুনের মধ্যে ক্লাসরুমের ভেতর থেকে শিক্ষার্থীদের একে একে বাইরে নিয়ে আসেন মাইলস্টোন কলেজের কো-অর্ডিনেটর মাহরিন চৌধুরী। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২০ শিশুকে বাঁচিয়েছিলেন এ সাহসিনী। তবে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে তিনিও চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
গতকাল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মাহরিন চৌধুরী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান।
এরপর মাহরিন চৌধুরীর ভাই মুনাফ মুজিব চৌধুরী এক ফেসবুক পোস্টে বোনের মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে লেখেন, মাহরিন আপু আর আমাদের মাঝে নেই। আমার বড় বোন, যিনি আমাকে মায়ের মতো করে বড় করেছেন।
তিনি আরও লিখেছেন, মাইলস্টোনে কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করতেন মাহরিন। আগুন লাগার পর তিনি প্রথমে বের হয়ে আসেননি, বরং যতজন শিক্ষার্থীকে সম্ভব বের করে আনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ১০০ শতাংশ দগ্ধ হন। আজ আপনারা দয়া করে আমার প্রিয় বোনের জন্য দোয়া করবেন। তিনি তার দুই ছেলেকে রেখে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।
এর আগে, মাহরিনের স্বামী মনসুর হেলাল বলেন, মাহরিন জানিয়েছে- স্কুল ছুটির পর বাচ্চাদের নিয়ে বের হচ্ছিলেন তিনি। ঠিক তখনই গেটের সামনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। নিজে দগ্ধ হলেও সে বাচ্চাদের বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়ে তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত শরীরের সব জায়গা পুড়ে গেছে।
উদ্ধারকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীরা চিৎকার করে দৌড়াতে থাকে। ঠিক তখনই শিক্ষক মাহরিন সাহসিকতার সঙ্গে অন্তত ২০ জন শিশুকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন।
এর আগে গতকাল দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বিমান বাহিনীর ‘এফ-৭ বিজিআই’ মডেলের একটি বিমান উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই উত্তরার মাইলস্টোন কলেজের একটি ভবনে আছড়ে পড়ে। প্রচণ্ড শব্দ আর আগুনে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন শতাধিক।