জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অষ্টম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ হবে আজ।
সোমবার (২৫ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে এ সাক্ষ্যগ্রহণ হবে।
আজ চারজন সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন সূত্র। গত ২৪ আগস্ট সপ্তম দিনের সাক্ষ্য-জেরা শেষ হয়। ওই দিন তিনজন সাক্ষী জবানবন্দি দিয়েছেন।
তারা হলেন— রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের অফিস সহকারী মো. গিয়াস উদ্দিন, একই প্রতিষ্ঠানের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজিবুল ইসলাম ও কুষ্টিয়ার স্থানীয় সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাদের জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা। এখন পর্যন্ত এ মামলায় ১৯ জনের জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে, ২০ আগস্ট ষষ্ঠ দিনের সাক্ষ্য-জেরা শেষ হয়। ওই দিন দু’জন চিকিৎসকসহ চারজন সাক্ষী নিজেদের জবানবন্দি দিয়েছেন।
তারা হলেন- ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, একই হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহনাজ পারভীন, ইবনে সিনা হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাসানুল বান্না ও শহীদ শেখ মেহেদী হাসান জুনায়েদের মা সোনিয়া জামাল। ট্রাইব্যুনালে এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।
গত ১৮ আগস্ট পঞ্চম দিনের সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন শহীদ আস-সাবুরের বাবা মো. এনাব নাজেজ জাকি, শহীদ ইমাম হাসান তাইমের ভাই রবিউল আউয়াল ও রাজশাহীর প্রত্যক্ষদর্শী জসিম উদ্দিন। তাদেরকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনও আসামি হিসেবে রয়েছেন। তবে তিনি নিজের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন।
গত ১৭ আগস্ট চারজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা হলেন- সবজি বিক্রেতা আবদুস সামাদ, মিজান মিয়া, শিক্ষার্থী নাঈম শিকদার ও শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহীনা বেগম। ৬ আগস্ট প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষ্য দেন রিনা মুর্মু ও সাংবাদিক একেএম মঈনুল হক। ৪ আগস্ট জবানবন্দি দেন পঙ্গু হওয়া শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান ও দিনমজুর চোখ হারানো পারভীন। ৩ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলার সূচনা বক্তব্যের পর প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন আন্দোলনে আহত খোকন চন্দ্র বর্মণ।
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
এ মামলায় তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার রয়েছে। এ ছাড়া সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন ৮১ জন।