দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে এবার বড় সংস্কার আসছে। ‘টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং নীতি ২০২৫’ প্রকাশ করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, যেখানে বিদায়ী হচ্ছে ২০১০ সালের আন্তর্জাতিক দীর্ঘ দূরত্ব টেলিযোগাযোগ সেবা (আইএলডিটিএস) নীতি। নতুন নীতিতে বিদ্যমান বহুস্তরীয় ও জটিল লাইসেন্সিং ব্যবস্থার পরিবর্তে একীভূত ও প্রযুক্তি-নিরপেক্ষ কাঠামো আনা হয়েছে।
প্রস্তাবিত নীতির প্রাথমিক আলোচনায় বলা হয়েছে, টেলিযোগাযোগ খাত বাংলাদেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রার অন্যতম ভিত্তি হলেও এখনো রয়েছে নানা জটিলতা, সেশনজট ও নেটওয়ার্ক দুর্বলতা। বিশেষ করে ফাইবার নেটওয়ার্ক ও সাবমেরিন কেবলের সক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহার না হওয়া, ডেটা সেন্টার অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং মানসম্মত সেবার অভাব খাতটির সম্ভাবনা ব্যাহত করছে। ফলে দেশীয় ট্রাফিক বিদেশি রুটে চলে যাচ্ছে, দুর্বল হচ্ছে জাতীয় ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব।
নীতির প্রাককথনে আরও বলা হয়েছে, বৈশ্বিক প্রযুক্তি যখন ভয়েস ও ডেটা সেবার সীমারেখা মুছে ফেলছে, তখন বাংলাদেশের খণ্ডিত ও স্তরভিত্তিক লাইসেন্স কাঠামো কার্যত বাজারের স্বাভাবিক গতিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করছে। নানা ধরনের লাইসেন্স থাকার কারণে বিনিয়োগ ও উদ্ভাবন নিরুৎসাহিত হচ্ছে, বাড়ছে পরিচালন খরচ ও জটিলতা। এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতেই নতুন নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।
আর এই নীতির প্রধান লক্ষ্য হলো— সরলীকৃত নেটওয়ার্ক টপোলজি প্রতিষ্ঠা, টেকসই বিনিয়োগবান্ধব লাইসেন্স কাঠামো তৈরি, সেবার মান বাড়ানো এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজার গড়ে তোলা। একই সঙ্গে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ করে দেওয়া, সাশ্রয়ী সেবা নিশ্চিত করা এবং বৈশ্বিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করাও নীতির অঙ্গীকার।
নীতির খসড়ায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সংযোগের দায়িত্ব নেবে ইন্টারন্যাশনাল কানেকটিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডারস। তারা ভয়েস, ডেটা, ইন্টারনেট, আইপি ট্রানজিট থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পিয়ারিং সেবার মতো সবকিছু পরিচালনা করবে। তবে সব ধরনের আন্তর্জাতিক সংযোগ দেশের ভেতর দিয়ে পরিচালনার বাধ্যবাধকতা থাকবে, যাতে অবৈধ রুট ও রাজস্ব ফাঁকি রোধ করা যায়।
অন্যদিকে, অভ্যন্তরীণ সংযোগ ও পিয়ারিংয়ে নতুন করে বাধ্যতামূলক ব্যবস্থাপনা আসছে। অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডারস (এএনএসপি)–দের স্থানীয়ভাবে ভয়েস ও ডেটার আন্তঃসংযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য কনসোর্টিয়াম গঠন বা যোগ্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেওয়ার সুযোগ থাকবে। এ ছাড়া বর্তমানে বিদ্যমান ন্যাশনাল ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ (এনআইএক্স) লাইসেন্স ভবিষ্যতে বাতিল করা হবে, তবে কার্যত একই ধরনের পিয়ারিং ব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে।
নীতির মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব সুরক্ষা, কর-জিডিপি অনুপাত ধরে রাখা, দেশীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং সর্বোপরি তরুণ ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য সাশ্রয়ী ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আব্দুন নাসের খান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফায়েজ আহমাদ তাইয়্যেব নতুন এই নীতিমালায় সই করেছেন।