প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের দুর্নীতি বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে সাধারণ মানুষের ‘হক’ নিশ্চিত করার জন্য দুদকের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতি আহ্বান থাকবে, যেই অবৈধ সম্পদ অর্জনের সঙ্গে জড়িত থাকুক, তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। সাধারণ মানুষের হক যাতে কেউ কেড়ে নিতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমি আবারও সবাইকে সতর্ক করে দিতে চাই – দুর্নীতিবাজ যে-ই হোক, যত শক্তিশালীই হোক না কেন – তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করি। মানুষের কল্যাণের জন্য আমি যে কোন পদক্ষেপ করতে দ্বিধা করবো না।’
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ভূমিধস বিজয় অর্জন করলে শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি একটানা তৃতীয় মেয়াদ এবং চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি বন্ধে জনগণের অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘মানুষ সচেতন হলে দুর্নীতি আপনা আপনি কমে যাবে।’
‘তাই আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করছি। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি নির্মুল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে,’যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। পবিত্র ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা করে কেউ যাতে তরুণদের বিপথে পরিচালিত করতে না পারে।’
তিনি বলেন, একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য যেখানে হিংসা-বিদ্বেষ হানাহানি থাকবে না। সকল ধর্ম-বর্ণ এবং সম্প্রদায়ের মানুষ যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে।’
ইসলামের অপব্যাখ্যা রোধকল্পে সারাদেশে ইমামসহ ধর্মীয় নেতাদের প্রশিক্ষণ এবং সারাদেশে ৬৫০টি মসজিদ-কাম-ইসলামিক সেন্টার নির্মাণে তাঁর সরকারের পদক্ষেপেরও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তাঁর রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ দেশের প্রচলিত আইন এবং সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি জনগণের রায়ই হচ্ছে ক্ষমতার পালাবদলের একমাত্র উপায়। যে কোন শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে, অযৌক্তিক দাবিতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড আমরা বরদাশত করবো না।’
তিনি দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, আপনারা অতীতে আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামাতের অগ্নি-সন্ত্রাস এবং মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা দেখেছেন। বাংলাদেশের মাটিতে এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের পুনরাবৃত্তি আর হতে দেওয়া হবে না।’
তাঁর সরকার বর্তমান জাতীয় সংসদকে কার্যকর করতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার এবং বিরোধীদলের সংসদ সদস্যগণের অংশগ্রহণ সংসদকে প্রাণবন্ত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর সরকার গঠনের এক বছর পূর্ণ হল। বিগত এক বছর আমরা চেষ্টা করেছি আপনাদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে।
তিনি বলেন, আমরা সবক্ষেত্রে শতভাগ সফল হয়েছি তা দাবি করবো না। কিন্তু এটুকু জোর দিয়ে বলতে পারি, আমাদের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘অতীতের ভুল-ভ্রান্তি এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব। আমাদের সামনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে। সকলের সহযোগিতায় আমরা সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবো, ইনশাআল্লাহ’।
তিনি বিগত এক বছরে গুটিকয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সৃষ্ট অনাকাঙ্খিত ঘটনা প্রতিরোধে তাঁর সরকারের পদক্ষেপ এবং সরকারের উদ্যোগ থাকার পরেও ডেঙ্গুরোগে প্রাণহানিতে দু:খ প্রকাশ করে এ রোগ প্রতিরোধে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন।
২০২০ সাল এবং পরবর্তী বছর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে জাতীয়ভাবে এ সময়ে ‘মুজিব বর্ষ’ এবং ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী’ উদযাপনের প্রসংগ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই উদযাপন শুধু আনুষ্ঠানিকতা-সর্বস্ব নয়, এই উদযাপনের লক্ষ্য জাতির জীবনে নতুন জীবনীশক্তি সঞ্চারিত করা। জাতিকে নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়া।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি এখন বাংলাদেশ। আইএমএফ-এর হিসেব অনুযায়ী পিপিপি’র ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান ৩০তম। প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারস-এর প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বে ২৩তম স্থান দখল করবে।’ ‘এইচ.বি.এস.সি’র প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৬তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে ২০২০-এ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলো থেকে এগিয়ে থাকবে।’ এ প্রসংগে তিনি মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, পাবনার রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ, ভারতের সঙ্গে স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহল সমস্যার সমাধান এবং মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমানার বিরোধ মীমাংসার ফলে বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশির উপর আমাদের স্বার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন।
অনলাইন নিউজ ডেস্ক/বিজয় টিভি