আজ ১৫ ডিসেম্বর । চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও টানা তিনবারের বিজয়ী মেয়র চট্টলবীর আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৭ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে অশ্রুসজল হয়েছিল লাখো মানুষ। আজকের এই দিনটিতে চট্টগ্রামবাসী গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে প্রিয় এই নেতাকে।
মহিউদ্দীন চৌধুরী ১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে বক্স আলী চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা রেল কর্মকর্তা হোসেন আহমদ চৌধুরী এবং মা বেদুরা বেগম। ছাত্র অবস্থাতেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
মহিউদ্দিন চৌধুরী ১৯৬২ সালে এসএসসি, ১৯৬৫ সালে এইচএসসি এবং ১৯৬৭ সালে ডিগ্রি পাস করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ এবং পরে আইন কলেজে ভর্তি হলেও ছাত্র আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ায় লেখাপড়া শেষ করতে পারেননি।
তিনি ১৯৬৮ ও ১৯৬৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। একাত্তরে গঠন করেন ‘জয় বাংলা’ বাহিনী। সেই সময় গ্রেফতার হন পাকিস্তানি সেনাদের হাতে। পরে পাগলের অভিনয় করে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে পালিয়ে যান ভারতে। সেখানে উত্তর প্রদেশের তান্ডুয়া সামরিক ক্যাম্পে প্রশিক্ষণরত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি স্কোয়াডের কমান্ডার নিযুক্ত হন মহিউদ্দিন।
এরপর শ্রমিক রাজনীতিতে যুক্ত হন তিনি। যুবলীগের নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলে প্রতিশোধ নিতে মৌলভী সৈয়দের নেতৃত্বে ‘মুজিব বাহিনী’ গঠন করেন মহিউদ্দিন। ওই সময় ‘চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র মামলা’র আসামি করা হলে তিনি পালিয়ে কলকাতায় চলে যান।
১৯৭৮ সালে দেশে ফেরেন বলে আত্মজীবনীমূলক বইয়ে উল্লেখ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনে সম্মুখ সমরে লড়াকু যোদ্ধা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন চট্টগ্রামের প্রগতিশীল রাজনীতিতে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি নাম। চট্টগ্রামের মানুষ তার মধ্যেই খুঁজে পান আরেক জনপ্রিয় রাজনীতিক জহুর আহমদ চৌধুরীর প্রতিচ্ছবি। একাত্তরের মাউন্টেন ডিভিশনের অধিনায়ক এই বীর মুক্তিযোদ্ধার ধ্যান জ্ঞান ছিল প্রিয় চট্টগ্রাম নিয়েই। তিনি ছিলেন শ্রমীকদের আশার আলো, বুকে হাত রেখে বলতেন, ‘আমার চট্টগ্রাম।’ তিনি ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত কয়েক দফায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের নগর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন।
পর পর তিন মেয়াদে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে নিয়ে যান অন্যরকম এক উচ্চতায়। গড়ে তোলেন স্বয়ংসম্পূর্ণ এক প্রতিষ্ঠানে। তার কার্যালয় এবং বাসভবন থাকত সর্বদা সাধারণের জন্য উন্মুক্ত।
যাঁদের বীরত্বগাঁথা অমর কৃতিত্ব ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই হয়েছে। তেমনি একটি জীবন একটি ইতিহাস ও সেই ইতিহাসের স্তম্ভের নাম এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। পেয়েছেন চট্টলবীরের খেতাব।
নিউজ ডেস্ক/বিজয় টিভি