তৈরি পোশাক খাতের মজুরি কাঠামোতে গ্রেড বৈষম্য দূর করার দাবিতে আন্দোলনের নামে কারখানা ভাঙচুরসহ নানা ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টির নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এবার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, আন্দোলনের নামে এখানে একশ্রেণির ষড়যন্ত্রকারীর অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। এই অরাজকতা সৃষ্টির পেছনে তাদের মদদ ছিল। তাদের ইন্ধন ছিল। তারা একটি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে দেশের রফতানিমুখী প্রধান এই খাতটিকে ধংসের পাঁয়তারা করেছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের শনাক্ত করেছে, তাদের চিহ্নিত করেছে। এবার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পালা।
ওই আন্দোলনে যেসব সংগঠনের শ্রমিক নেতাদের উসকানি ছিল সেসব সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন বাতিলও হতে পারে। একই সঙ্গে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধন করা ও জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টির দায়ে অনেক অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে স্থানীয় থানায় মামলা রয়েছে। শনাক্ত ব্যক্তিদের ওই মামলায় গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হতে পারে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেছেন, এই আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারী রয়েছে যারা শ্রমিক নয়। এ অবস্থায় হুঁশিয়ারি দিয়ে শ্রমিকদের কারখানায় ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তারা। এই দুই মন্ত্রীই মনে করেন, কোনও শ্রমিক ধসংসাত্মক কর্মকান্ড চালাতে পারে না। কারণ, মালিক ও শ্রমিক একই বাইসাইকেলের দুটো চাকার মতো। একটি না থাকলে আরেকটি চলবে না।
বাণিজ্যমন্ত্রী ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকারের একাধিক সংস্থা এসব বিষয় নজরে রেখেছে। কারা এসবের সঙ্গে যুক্ত তাদের খুঁজে বের করতে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে কাজ করছে। এসব অরাজকতা রোধে সরকার বসে থাকবে না বলেও জানান তারা।
এ প্রসঙ্গে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আফরোজা খান জানিয়েছেন, বেতনভাতার দাবিতে এ আন্দোলন হয়েছে, এমনটি মনে করার কোনও কারণ নেই। অন্য কারণ আছে। তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, যেসব কারখানায় নিয়মিতভাবে স্ট্যান্ডার্ড বেতনভাতা দেওয়া হয় সেসব কারখানাও ভাঙচুর করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর থেকেই কার্যকর করা হয়েছিল তৈরি পোশাক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের নতুন বেতনকাঠামো। আর সেই বেতনকাঠামোকে সামনে রেখে দেশে একটি মহল পোশাক খাতে অসন্তোষ সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে, এমন আশঙ্কা থেকে কঠোর নজরদারির আওতায় রাখা হয়েছিল তৈরি পোশাক খাতকে। নির্বাচন শেষে বিজয়ী দলের নেতৃত্বে নতুন সরকারের শপথ ও দায়িত্বভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত এ নজরদারি চলে। তৈরি পোশাক কারখানা অধ্যুষিত নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া, চট্টগ্রাম ও টঙ্গী এলাকা নজরদারির আওতায় ছিল। একই সঙ্গে কথিত শ্রমিক নেতা নামে পরিচিতদের গতিবিধিও নজরে রেখেছিলেন একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
নিউজ ডেস্ক / বিজয় টিভি