নিউজ ডেস্ক / বিজয় টিভি
বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার থানার চুড়ি হাট্টা শাহী মসজিদের সামনে একটি পিকআপের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আশেপাশের ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট সাড়ে চারঘণ্টার মতো কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় দগ্ধসহ আহত কমপক্ষে অর্ধশত ব্যক্তিকে ইতোমধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকায় রাজ্জাক ভবনে লাগা আগুনের ঘটনায় উদ্ধার করা বেশ কিছু লাশ পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। চেহারা দেখে শনাক্ত করার উপায় নেই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ এ কথা জানান।
সোহেল মাহমুদ জানিয়েছেন, যেসব লাশ পুড়ে গেছে কিন্তু চেহারা দেখে শনাক্ত করা যায় তাদের ময়নাতদন্ত করে আজকেই স্বজনদের দেওয়া হবে। তবে, যাদের লাশ পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে শনাক্ত করার জন্য তাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এ জন্য কিছুটা সময় লাগতে পারে।
আজ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, তাদের এখানে এখন পর্যন্ত মোট ৬৭টি লাশ আনা হয়েছে। তার মধ্যে কিছু লাশ আছে যেগুলো পুড়ে গেছে কিন্তু চেহারা শনাক্ত করা যাবে। কিছু লাশ পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। চেহারা দেখে বা ফিঙ্গারপ্রিন্টে শনাক্ত করা সম্ভব নয়। তাদের জন্য ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করতে হবে। যাদের চেহারা শনাক্ত করা যাবে সেগুলো ময়নাতদন্ত করে আজ লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী সকাল সাড়ে আটটার দিকে ব্রিফিংয়ে জানান, ৭০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আরও লাশ থাকতে পারে। উদ্ধার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত লাশের সংখ্যা জানা যাবে না বলছে ফায়ার সার্ভিস।
গতকাল রাত ১০টা ১০ মিনিটে নন্দকুমার দত্ত সড়কের চুরিহাট্টা মসজিদ গলির রাজ্জাক ভবনে আগুন লাগে। রাতে পৌনে একটার দিকে পাশের কয়েকটি ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। চকবাজার এলাকার গ্যাস লাইন থেকেও ওই সময় আগুন বের হচ্ছিল। অগ্নিকা-ের পর ওই এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজ্জাক ভবনের নিচতলায় রাসায়নিক দ্রব্যের কারখানা ছিল।
রাজধানীর চকবাজার মোড়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের বেশিরভাগই সড়কে চলাচলরত অবস্থায় এবং শাটার বন্ধ করে দেওয়া দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভেতর আটকা পড়ে মারা যান। প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা এই তথ্য জানিয়েছেন।
আজিজুল ইসলাম নামে এক ফায়ারম্যান জানান, ‘আগুন লাগা ভবনটির নিচতলার মার্কেটের করিডরের শেষ মাথা থেকে একসঙ্গে ২৪টি লাশ উদ্ধার করি আমরা। দেখে মনে হয়েছে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তারা দৌড়ে গিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এছাড়া আশেপাশের দোকান ও রেস্টুরেন্ট থেকেও লাশ উদ্ধার করা হয়।’
সরেজমিনে দেখা যায়, চকবাজারের চুরিহাট্টা মোড়টি একটা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। সড়কে দুটি পিকআপ ভ্যান, একটি প্রাইভেটকার, অসংখ্য রিকশা, ভ্যান, সাইকেল, মোটরবাইক, ঠেলাগাড়ি পুড়ে গেছে। এছাড়া ভেঙে পড়া কংক্রিটের দেয়াল, প্লাস্টিকের দানা, পারফিউমের ক্যান পড়ে রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার সময় চুরিহাট্টা মোড়টি যানজটে ঠাসা ছিল। একারণে রাস্তাতেই অনেকে পুড়ে মারা গেছে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে জানান, ‘এখন পর্যন্ত ৭০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও ঘটনাস্থলে সার্চ অভিযান চলছে।’
শাহবাগ থানার এসআই জসিম উদ্দিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাখা লাশগুলোর বিষয়ে বলেন, ‘এখনও কোনও লাশ আনুষ্ঠানিকভাবে শনাক্ত করা হয়নি। ডিএনএ-সহ লাশ শনাক্তকরণের যেসব প্রক্রিয়া আছে সেগুলো সম্পন্ন করা হবে। তবে স্বজনদের কেউ কেউ নিজেদের মতো করে লাশ শনাক্ত করেছেন।’
নিউজ ডেস্ক / বিজয় টিভি