দেশে বাণিজ্যিকভাবে ভুট্টা থেকে তেল উৎপাদন করতে পারলে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা অনেক হ্রাস পাবে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক। একইসাথে ভুট্টাচাষিরা অনেক লাভবান হবে ও পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়ক হবে বলেও মনে করেন তিনি।
কৃষিমন্ত্রী গতকাল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নাসির স্টার্চ, অয়েল অ্যান্ড অ্যানিমেল ফিড ইন্ড্রাস্টিজ লিমিটেড পরিদর্শন শেষে এ অভিমত ব্যক্ত করেন। এসময় বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো: এছরাইল হোসেন, নাসির গ্লাসওয়্যার অ্যান্ড টিউব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার মো: ফজলুল রহমান, ডিজিএম মো: কাজিমুল বাশারসহ ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও ভুট্টা থেকে তেল উৎপাদনের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। দেশে শিল্প-কারখানা স্থাপন করে বাণিজ্যিকভাবে ভুট্টার তেল উৎপাদন করতে পারলে একদিকে যেমন বিদেশ থেকে তেল আমদানি হ্রাস পাবে অন্যদিকে তেলের দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। কৃষিমন্ত্রী এসময় উদ্যোক্তাদের ভুট্টার তেল উৎপাদনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং এ ব্যাপারে সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন।
গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে উৎপাদিত ৫৪ লক্ষ টন ভুট্টা থেকে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টন তেল প্রতি বছর আহরণ করা সম্ভব যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। তেল তৈরির পাশাপাশি ভুট্টা থেকে কর্নফ্লেক্স, কর্নচিপস্ তৈরি করাও সম্ভব।
বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু ভুট্টা চাষের অনুকূল। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত জমিতেও ভুট্টার ভাল ফলন হচ্ছে। কৃষকদের কাছেও ভুট্টা চাষ জনপ্রিয়তা লাভ করছে। ফলে ভুট্টার উৎপাদন ক্রমশ বাড়ছে। বর্তমানে দেশে ভুট্টা চাষের মোট আবাদি জমি ৫.৫ লক্ষ হেক্টরেরও অধিক আর উৎপাদন ৫৪ লক্ষ মে. টন। উন্নত দেশে ভুট্টার বহুমুখী ব্যবহার থাকলেও দেশে শুধু প্রাণি, পোল্ট্রি ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত ভুট্টার অধিকাংশই (৯৫%) প্রাণি, হাঁস-মুরগির ফিড ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে, ইদানিং খই ভুট্টা, মিষ্টি ভুট্টা (৫%)মানুষের খাদ্য হিসেবেও বেশ গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে।
গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যে আরও জানা যায়, উন্নত বিশ্বে ভুট্টা থেকে স্টার্চ, ইথানল, জৈব জ্বালানি, তেল উৎপাদনসহ রয়েছে আরো বহুমুখী ব্যবহার। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৫২টি দেশে ভুট্টা থেকে উৎকৃষ্ট মানের ভোজ্য তেল উৎপাদিত ও ব্যবহৃত হয়। ভুট্টা তেলে ভিটামিন ই (টোকোফেরল) এর পরিমাণ সূর্যমুখী তেলের চেয়ে বেশি। বিশেষত: ভুট্টা তেলে ভিটামিন কে (১.৯ মাইক্রো গ্রাম) রয়েছে, সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলে তা অনুপস্থিত। এছাড়াও সালাদ, বিস্কুট, চানাচুর, কেক, পাউরুটি, মাখন তৈরি করতে ভুট্টা তেল ব্যবহৃত হয়।