২১ মার্চ, ১৯৭১। এদিন অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে মুক্তিপাগল হাজার হাজার মানুষের দৃপ্ত পদচারণায় রাজধানী ঢাকা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে মিছিল যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। মুক্তির শপথ নিয়ে সেখান থেকে মিছিল যায় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে। যেকোনো ত্যাগের জন্য জনগণকে প্রস্তুত থাকতে বলেন বঙ্গবন্ধু। আহ্বান জানান শৃঙ্খলা ও ঐক্য বজায় রাখতে।
এদিন ইয়াহিয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ৯০ মিনিটের এক বৈঠক হয়। বৈঠকে মিলিত হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে বিশিষ্ট আইনজীবী এ. কে. ব্রোহির সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন তিনি। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ৫ম দফা বৈঠকের সময় প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন। ইয়াহিয়ার সঙ্গে বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু জানান, আগের আলোচনার কতগুলো বিষয়ের ব্যাখ্যার প্রয়োজনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার আমন্ত্রণে পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো ২১ মার্চ বিকেলে সদলবলে করাচি থেকে ঢাকায় আসেন। ভুট্টোর আগমন উপলক্ষে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে সেনা মোতায়েন করা হয়। সাংবাদিকদের বিমানবন্দরে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। ভুট্টোকে বিমানবন্দর থেকে হোটেল ইন্টার-কন্টিনেন্টালে নিয়ে আসার সময় রাস্তার দু’পাশের পথচারীরা ভুট্টো-বিরোধী স্লোগান দেয়।
এদিন বিকেলে চট্টগ্রামে পোলো গ্রাউন্ডে এক বিশাল জনসভা হয়। সেখানে ন্যাপ প্রধান আবদুল হামিদ খান ভাসানী বলেন, আলোচনায় ফল হবে না। এদেশের হাইকোর্টের বিচারপতি থেকে চাপরাশি পর্যন্ত যখন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে মানে না, তখন শাসনক্ষমতা শেখ মুজিবের হাতে দেওয়া উচিত।
২১ মার্চ সন্ধ্যায় পিপলস পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো কড়া সেনা প্রহরায় প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। সেখানে ভুট্টো দু’ঘণ্টারও বেশি সময় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক শেষে হোটেলে ফেরেন। হোটেল লাউঞ্জে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের ভুট্টো বলেন, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
ভুট্টো সাংবাদিকদের আর কিছু না বলে সরাসরি লিফটে চড়েন। সাংবাদিকরা তার সঙ্গে যেতে চাইলে ব্যক্তিগত প্রহরীরা অস্ত্র উঁচিয়ে বাধা দেয়। পরে হোটেলে ভুট্টো তার উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।
১৯ মার্চ জয়দেবপুরে জারিকৃত কারফিউ ২১ মার্চ দুপুর ১২টায় ৬ ঘণ্টার জন্য প্রত্যাহার করা হয়। পরে সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পুনরায় কারফিউ বলবৎ করা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন আগামী ২৩ মার্চ প্রতিরোধ দিবসের কর্মসূচির প্রতি তাদের সমর্থন ঘোষণা করে।
মগবাজারে মহিলা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে এক মহিলা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সেনাবাহিনীর প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে একটি প্যারা-মিলিটারি গঠনের আহ্বান জানানো হয় আজকের এই দিনে।