বাংলাদেশে গণমাধ্যম যে পরিমাণ স্বাধীনতা ভোগ করে অনেক উন্নত দেশও এই পরিমাণ স্বাধীনতা ভোগ করে না বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত ‘৫০ বছরে গণমাধ্যমের অর্জন ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
হাছান মাহমুদ বলেন, যুক্তরাজ্যে একটি ভুল সংবাদ পরিবেশিত হওয়ার কারণে ১৬৭ বছরের পুরানো পত্রিকা ‘নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ বন্ধ হয়ে যায়। প্রথম সারির গণমাধ্যম বিবিসিতে একজন এমপির বিরুদ্ধে অসত্য সংবাদ পরিবেশিত হওয়ার পর মামলা হলে প্রধান নির্বাহী থেকে শুরু করে পুরো টিমকে পদত্যাগ করতে হয়। যুক্তরাজ্যে প্রতিনিয়ত ভুল সংবাদ পরিবেশনের কারণে টেলিভিশন এবং পত্রপত্রিকাকে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হয়। আমাদের দেশে ভুল সংবাদ, অসত্য সংবাদ পরিবেশিত হয় না এটি কেউ বলতে পারবে না। অসত্য সংবাদ প্রচারের কারণে কোনও সংবাদপত্র বন্ধ হয়েছে এমন ঘটনা ঘটেনি।
৫০ বছরের গণমাধ্যমে ব্যাপক বিকাশ হয়েছে উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ‘আমি ৫০ বছরের খতিয়ান দেবো না। আমি গত ১২ বছরের খতিয়ান দিতে চাই। ১২ বছর আগে বাংলাদেশে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ছিল ৪৫০, এখন ১২৫০। ১২ বছর আগে টেলিভিশন ছিল ১০টি। এই বেসরকারি টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব পাওয়ার পর। এখন অন এয়ারে আছে ৩৪টি এবং আরও অন এয়ারে আসার অপেক্ষায় আছে ১১টি। অনলাইন গণমাধ্যম আগে হাতে গোনা কয়েকটি ছিল। এখন কয়েকশ কিংবা কয় হাজার সেটি একটি পরীক্ষা নিরীক্ষার বিষয়। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঁচ হাজার আবেদন জমা পড়েছে নিবন্ধনের জন্য। আমরা ইতোমধ্যে কয়েকশ দিয়েছি, আরও কয়েকশ দেওয়া হবে। এভাবে গণমাধ্যমের এক্সপটেনশিয়াল গ্রোথ (দ্রুত বৃদ্ধি) হয়েছে বাংলাদেশে। এই গ্রোথের সঙ্গে নানা চ্যালেঞ্জও যুক্ত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে কোনও একজনের বিরুদ্ধে একটি বক্তব্য দেওয়া হলে তিনি প্রতিবাদ জানান। ভুল সংবাদ প্রথম পাতায় বড় করে আর প্রতিবাদটি তৃতীয় পাতায় ছোট্ট করে ছাপানো হয়। কিছু পত্রিকার ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যতিক্রম আছে। আর টেলিভিশনে যদি অসত্য সংবাদ পরিবেশিত হয় সেটার প্রতিবাদ সেখানে কোনোভাবেই যায় না। এটি বাস্তবতা। গণমাধ্যমের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের প্রত্যেকের সম্মিলিত দায়িত্ব রয়েছে যাতে আমার স্বাধীনতা যেন অপরের স্বাধীনতাকে হরণ না করে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘করোনাকালে উপমহাদেশে কোনও সাংবাদিকদের জন্য প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান কোথাও দেওয়া হয়নি। আমাদের দেশে করোনাকালে সাংবাদিককল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে এককালিন ১০ হাজার টাকা করে ইতোমধ্যে তিন হাজার সাংবাদিককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আরও এক হাজারের চেয়ে কিছুটা বেশি আমরা দিতে পারবো।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই আইন সারাদেশের মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। এটা কোনও গোষ্ঠীর জন্য নয়। একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চরিত্র হন করা হয়, কিংবা তার পরিবার সম্পর্কে লেখা হয় তিনি কোন আইনে প্রতিকার পাবেন? এই আইনে তিনি প্রতিকার পাবেন। এই আইন একজন লেখক, গৃহিণী, কৃষক, চাকরিজীবী, রাজনীতিবিদ সবার ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। যখন ডিজিটাল বিষয়টি ছিল না তখন এই আইনেরও প্রয়োজন ছিল না। বাংলাদেশে এই আইনের যেই ধারা নিয়ে কথা হচ্ছে, ভারতেও ইনফরমেশন টেকনোলোজি অ্যাক্টে একই ধারা ৬৬ ধারা। একই ধরনের আইন আছে পাকিস্তানে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি ফ্রেইম ওয়ার্ক ল করেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য। এছাড়া সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানিসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ধরনের আইন হচ্ছে।‘
তিনি আরও বলেন, ‘এই আইনের অপপ্রয়োগের বিরুদ্ধে আমি। এখানে যাতে কোনও সাংবাদিক অহেতুক নিপীড়িত না হয়, সেটি নিয়ে আমিও আপনাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত আলোচনায় থাকি। এখানে যে জামিন হয় না তা নয়। আমি নিজেই অনেকের জন্য জামিনের চেষ্টা করেছি। এখানে আরও কী করা যায় সেটি আলোচনার বিষয়। এই আইনে কারও ওপর যাতে অপপ্রয়োগ না হয় সেটির জন্য আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।’