চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে বিউটিশিয়ান মমতাজ বেগম রিক্তাকে গলা ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর কম্বল পেঁচিয়ে ঘরের ভেতর টয়লেটে রেখে দেওয়া হয় তার নিথর দেহ। খবর পেয়ে বুধবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
জানা যায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের চরমান্দারি এলাকার বেপারী বাড়িতে নিজ বসতঘর থেকে রিক্তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত রিক্তা বেপারী বাড়ির মৃত এমদাদ উল্লাহর ছোট মেয়ে।
এলাকাবাসী জানায়, রিক্তা ফরিদগঞ্জ গৃদকালিন্দিয়া বাজারের বধূবরণ বিউটি পার্লারের মালিক ও বিউটিশিয়ান। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাড়িতে ফিরেন তিনি। স্বামী প্রবাসে ও তার কোনো সন্তান না থাকায় মৃত বোনের একমাত্র ছেলে বাপ্পিকে নিয়ে বসবাস করতেন রিক্তা। বাপ্পি গৃদকালিন্দিয়া বাজারে একটি দোকানে মোবাইল মেরামতের কাজ শিখছেন।
বুধবার রাত ৮টার দিকে বাপ্পি বাড়ি ফিরে তার খালা রিক্তাকে ঘরে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করেন। পরে ঘরের মেঝেতে রক্ত দেখে বাড়ির লোকজনকে বিষয়টি জানান। এরপর রিক্তার চাচাতো ভাই মাহফুজুর রহমানের মেয়ে ঐশী আক্তার তার মা ও বাপ্পিসহ ঘরে ঢুকে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে ঘরের ভেতরের টয়লেটে কম্বল মোড়ানো অবস্থায় রিক্তার রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান তারা। ঐশী তার বাবা মাহফুজুর রহমানকে ৯৯৯- এ কল করে পুলিশকে বিষয়টি জানান। পরে ঘটনাস্থল থেকে রিক্তার ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
রিক্তার বোনের ছেলে বাপ্পি জানান, আমার জন্মের পর মা মারা যাওয়ায় এই খালার কাছেই বড় হয়েছি। বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে খালামনিকে দেখেছি বাজার থেকে পুরি নিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছে। আমি রাত ৮টার দিকে বাজার থেকে বাড়িতে এসে দেখি ঘরের দরজা বন্ধ। খালাকে অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া না পেয়ে দরজার লকে হাত দেই, আর সঙ্গে সঙ্গে দরজার লক খুলে যায়। এ সময় ঘরে বিদ্যুৎ ছিল না। ঘরে ঢুকে দেখি ঘরের মেঝেতে খালার বোরখা রক্তমাখা। আমি চিৎকার করে পাশের ঘরের মাহফুজ মামার স্ত্রী লাকি মামিকে ডেকে আনি। পরে মামি ও তার মেয়ে ঐশীসহ ঘরে ভেতরে খুঁজে না পেয়ে টয়লেটের দরজা খুলে দেখে খালা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন।
একই বাড়ির মাহফুজুর রহমান জুয়েল বলেন, এই ঘটনা দেখেই আমি জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশকে জানাই। রিক্তা আমার চাচাতো বোন। গত প্রায় দশ বছর আগে চট্টগ্রামে রিক্তার বিয়ে হয়েছে। রিক্তার স্বামী রাকিবুল হাসান দুবাই প্রবাসী। গত দুইমাস আগে সে ছুটি কাটিয়ে গেছে। রিক্তার কোনো সন্তান নেই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হুমায়ূন কবির জানান, রাতে ৮টা ৫৭মিনিটের সময় একই বাড়ির ইসমাইল মাস্টার ফোন করে জানিয়েছেন রিক্তাকে কারা কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমি এই ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে এসেছি। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত হত্যাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।
ফরিদগঞ্জ থানার তদন্ত (ওসি) প্রদীপ মন্ডল জানান, খুনের বিষয়ে মাহফুজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি জাতীয় জরুরি ৯৯৯- এ ফোন করেন। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক আমরা ঘটনাস্থলে এসে রিক্তার মরদেহ উদ্ধার করেছি। এটি হত্যাকাণ্ড। তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।