সিলেটে নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত বাড়লে সিলেটে পানি বেড়ে যায়। রোববার (১৬ জুন) দুপুর ১২টা পর্যন্ত সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীর পানি ৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেটে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ২৮ মিলিমিটার ও ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা বলছে আবহাওয়া অফিস।
পাহাড়ি ঢলে সিলেটের ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সীমান্তবর্তী উপজেলায় বন্যা দেখা দেওয়ায় সাদাপাথর, জাফলংয়ে পর্যটকদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, দুপুর ১২টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৬০ সেন্টিমিটার ও সারি নদী সারি পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টেও বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে।
ভারতের মোঘালয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় হওয়া ৪৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের কারণে উড়ান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হওয়া শুরু করেছে। রোববার (১৬ জুন) জেলার গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়া শুরু করেছে। গোয়াইনঘাট উপজেলা সদর, রুস্তুমপুর, লেংগুড়া, ডৌবাড়ি, নন্দীরগাঁও, পূর্ব ও পশ্চিম আলীরগাও, পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলং ইউনিয়নের হাওর ও নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। উপজেলার সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। যার কারণে ওই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং সড়কের শিমুলতলায় সড়কের উপর দিয়েও পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গোয়াইনঘাটের জাফলং পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের সতর্কভাবে চলাফেরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, গত তিন দিনের অতিবৃষ্টি ও সীমান্তবর্তী ভারতের পাহাড়ি ঢলে গোয়াইনঘাট উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের হাওরে পানি প্রবেশ করেছে। এতে পবিত্র ঈদুল আজহার সময় আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। বেশকিছু সড়ক ডুবে গেছে। যে সকল এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ ও প্লাবিত হতে পারে, সেই সব এলাকার ঘরবাড়ী, বাজার ও দোকান থেকে মালামাল নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে স্থানীয়দের সতর্ক করা হচ্ছে। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে মোট ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও প্লাবন প্রবণ এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রে জনগণকে দ্রুত অবস্থান নিতে মাইকিং করা হচ্ছে। জাফলংয়ে পর্যটকদেরও সতর্ক করা হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ছনবাড়ি, চিকাডহর, শাহ আরেফিন বাজার ও জালিয়ারপাড় গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। যার কারণে মানুষজন বাড়িঘর থেকে বের হতে পারছেন না। এখানকার ছনবাড়ি-ভোলাগঞ্জ সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া উপজেলার নিম্নাঞ্চলে আগে থেকে বন্যার পানি ছিল। চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে পানি আরও বাড়তে শুরু করেছে। ধলাই নদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে উপজেলায় আবারও বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিচ্ছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সনজিত কুমার দাশ জানান, উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি সাদাপাথরে ভ্রমণে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন জানান, আগামী ৭২ ঘণ্টায় আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে সিলেটের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। অতিবৃষ্টি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে সিলেটের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন যদি সেখানে এভাবে বৃষ্টিপাত চলতে থাকে, তাহলে সিলেটের অবস্থা খারাপ হবে। চেরাপুঞ্জিতে যদি প্রতিদিন ২০০ মিলিমিটারের অধিক বৃষ্টিপাত হয়, তা হলে সিলেটে বড় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।