দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৩৫ শতাংশের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক তামাক ব্যবহার করেন। যার ফলে তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। এ অবস্থায় তামাকের প্রভাবে এসব অকাল মৃত্যু কমিয়ে আনতে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) দ্রুত সংশোধন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হলরুমে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বর্তমান অবস্থা ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। এ আয়োজনে সহযোগিতা করে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, তামাকের কোনো ভালো গুণ নেই। বরং তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের ফলে মানবদেহে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের ফলে দেশে প্রতিদিন প্রায় ৪৫০ জন মানুষ মারা যাচ্ছে।
এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, আইন না থাকায় মানুষ অন্যায় করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আইন থাকলে মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করবে। ব্যবসায়ীরা যার যার স্বার্থ দেখে। অথচ এ খাত থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায়, তার কয়েকগুণ বেশি টাকা তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় খরচ হয়।
তিনি আরও বলেন, সিগারেট মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীর আক্রান্ত করে। ধূমপান প্রতিরোধে আইন করতে হবে। আইন করতে গেলে প্রতিবন্ধকতা থাকবেই। তারপরও এ আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। তামাক, জর্দা, ও গুল এগুলো নিষিদ্ধ করতেই হবে।
মতবিনিমিয় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম বলেন, আইনে যাই থাকুক, সব থেকে বড় কথা জনসচেতনতা বাড়ানো। দোকানে বিড়ি সিগারেট খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রচারের ক্ষেত্রেই জোর দিতে চাই। এ জন্য সরকারি বিজ্ঞাপনে ধূমপানের সতর্কতা বা ভয়ের একটা লাইন যুক্ত করা, স্বাস্থ্য বিষয়ক সব প্রচারে ধূমপান সতর্কতা থাকা উচিত।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের ওপরে ট্যাক্স বাড়ানো দরকার। যাতে তামাকজাত দ্রব্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকে। এতে তামাকপণ্য ব্যবহারের হার কমে যাবে। এছাড়া ট্যাক্স ডাবল করা গেলে ৮-১০ হাজার কোটি টাকা এই খাত থেকে স্বাস্থ্যের বাজেটে আসতে পারে।
বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মো. রাশেদ রাব্বির উপস্থাপনায় মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন সোহেল। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে তিন কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। তাই ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বজায় রেখে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে অধূমপায়ীদের সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। কাজেই বিদ্যমান আইনের ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা’ রাখার বিধান বাতিল করতে হবে।
আজকের মতবিনিময় সভায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের এন্টি-ট্যোবাকো প্রোগ্রামের কো-অরডিনেটর লাইনুন নাহারসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।