সম্প্রতি গাজীপুরের শ্রীপুরে রেললাইন কাটা হয় যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু’র নির্দেশনায় এবং ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান যুবদল নেতা ইখতিয়ার রহমান কবির (৪৩) এতে নেতৃত্ব দেন। রেললাইন কেটে নাশকতার ঘটনার ‘মূলহোতা’ কবিরসহ দুজনকে গ্রেফতারের পর এই তথ্য জানিয়েছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
গ্রেফতার হওয়া অপরজন হলেন, রাজধানীর লালবাগ থানার ২৪ নম্বর ওয়ার্ড মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি ইমন হোসেন (১৯)।
এর আগে একই ঘটনায় গাজীপুরের গোয়েন্দা পুলিশ স্থানীয় কাউন্সিলর আজমলসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার হওয়া তিন জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঢাকা থেকে দুজন তাদের সঙ্গে লাইন কাটায় নেতৃত্ব দেন বলেও স্বীকার করে।
ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট বলছে, রেললাইনে নাশকতা সৃষ্টি করে সাধারণ জনগণের মাঝে ভীতি সঞ্চার এবং ব্যাপক প্রাণনাশের পরিকল্পনা করেছিল যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু। তিনি কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করে দলীয় উচ্চ পর্যায় থেকে ‘বড় কিছু করার চাপ আছে’ বলে জানান। এজন্য রেললাইন কাটার পর দলীয় ফান্ড থেকে তাদের মোটা অংকের টাকাও দেওয়া হয়।
সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিটিটিসি প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, রাজধানীতে গাড়িতে ভাঙচুর, আগুন দেওয়া ও বোমা বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। সাধারণ মানুষ রেলকে নিরাপদ বাহন হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। কিন্তু ট্রেনে চলাচল করা মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়াতে ও রেল চলাচল বিঘ্ন করতে নাশকতার পরিকল্পনা করে। পাশাপাশি নাশকতার মাধ্যমে রেলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটানোর উদ্দেশ্য ছিল।
তিনি জানান, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুবদলের শীর্ষনেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নির্দেশে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি ইখতিয়ার রহমান কবিরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কবির গাজীপুর ছাত্রদলের দুই নেতা আজিমুদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক তোহা, ও গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাদের স্থান নির্বাচন করে নাশকতা সফল করতে বলা হয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য তোহা ও মাসুম মিলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সিটি করপোরেশনের ২৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান আজমল ভূঁইয়ার বাসায় একটি বৈঠক করে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কৌশল ঠিক করে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, প্রথমে তাদের সিদ্ধান্ত ছিল রেললাইনের নাট-বল্টু খুলে ট্রেন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা। কিন্তু তারা নাট-বল্টু খোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এরপর বিষয়টি কবিরকে জানানো হয়। পরে কবির রেললাইন কাটার নির্দেশ দেয়, পাশাপাশি এ জন্য লোকবল দেওয়ার কথা জানায়। সেই মোতাবেক সে লালবাগ থানার ২৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি ইমন হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। প্রথমে ইমনকে বড় লোহার পাত কাটা শেখার জন্য টাকা দেয়। ইমন লোহা কাটার প্রশিক্ষণ নেন। এরপর স্থানীয়ভাবে গ্যাস সিলিন্ডার কেনা হয়। আর লোহা কাটার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য যন্ত্রপাতি ঢাকা থেকে কেনা হবে। ১০ ডিসেম্বর কবির, ইমন, তোহা ও মাসুম মিলে রাজধানীর পুরান ঢাকার নবাবপুরের একটি দোকান থেকে সকল যন্ত্রপাতি কিনে ইমনের বাসায় রাখে।
তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ১২ ডিসেম্বর ইমনের বাসা থেকে যন্ত্রপাতি গাজীপুর নিয়ে যাওয়া হয়। একই দিন ইমন ও কবির কমলাপুর থেকে ট্রেনে করে জয়দেবপুর রেল স্টেশনে যায়। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তোহা ও মাসুম চলাচলের জন্য মাইক্রোবাস ভাড়া করা, গ্যাস সিলিন্ডার কেনাসহ সকল প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। এই সময়ে তারা ট্রেনের শিডিউল জেনে রাখে। এরপর ১৩ তারিখ রাতে স্থানীয় একটি রেস্তরায় রাতের খাবার খাওয়ার পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে রওনা দেয়। এই সময়ে বেশ কয়েকজনকে পথ থেকে তুলে নেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ঘটনাস্থলে মোট ৯ জনে একত্রিত হয়ে রেললাইন কাটার কাজ শুরু করে। আগে থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া ইমন অন্যদের সহযোগিতায় রেললাইন কাটে। এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী কবির পরিকল্পনা করা এবং বাস্তবায়নের সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল।