আজ ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস । ১৯৫২ সালের এই দিনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে নামেন বাংলার দামাল ছেলেরা। পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান সালাম-বরকত-রফিক-শফিক-জব্বার প্রমূখ। দিবসটি উপলক্ষে ডাক অধিদপ্তর স্মারক ডাকটিকেট, উদ্বোধনী খাম ও ডাটা কার্ড প্রকাশ করছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার রোববাব ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় তার সরকারি বাসভবনের দফতরে এ বিষয়ে ১০ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাকটিকিট ও ১০ টাকা মূল্যমানের একটি উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত করেন। এছাড়া ৫ টাকা মূল্যমানের একটি ডাটাকার্ড উদ্বোধন করা হয়। মন্ত্রী এ সংক্রান্ত একটি সীলমোহর ব্যবহার করেন। তিনি এ বিষে একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
মন্ত্রী বিবৃতিতে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ভাষা-একটি জাতির আত্মপরিচয়ের প্রধানতম হাতিয়ার। এটি শুধু চিন্তা-চেতনা, মনন ও মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যমই নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশ ও সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জীবনবোধ। হাজার বছর ধরে বাংলা ভাষা প্রকাশ করে যাচ্ছে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব ও স্বকীয়তা। একুশের পথ ধরেই বাংলার স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে।ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন,১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে এক অনন্য অবিস্মরণীয় দিন। এদিন ভাষার দাবিতে প্রথম হরতাল পালিত হয়। এটাই হলো পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর প্রথম হরতাল। হরতালের নেতৃত্ব দেন শেখ মুজিবুর রহমান। ওইদিন তিনি পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এটি ছিল পাকিস্তানে কোনো প্রথম রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার। সেই থেকে শুরু করে বাংলাদেশ নামক বাংলা ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত একক নেতৃত্ব ছিলো জাতির পিতার।।তিনি বলেন,একুশ মানে মাথা নত না করা; একুশ মানে দৃপ্ত পওদ সামনে এগিয়ে যাওয়া। মন্ত্রী বলেন,২১শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বাঙালি তরুণদের আত্মদান শুধু বাংলাদেশ বা বাঙালির নয়, তা এক বিশ্বজনীন ঘটনা। বলা চলে, ১৯৪৮ সালের মার্চে সীমিত পর্যায়ে যে আন্দোলন শুরু হয় ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তার চরম প্রকাশ ঘটে।
এরই ধারাবাহিকতায় অভ্যূদয় ঘটে বাঙালির ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র বাংলাদেশ। ভাষা আন্দোলনের পর বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদান, সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু, সংসদের দৈনন্দিন কার্যাবলী বাংলায় চালু প্রসঙ্গে আইন সভায় গর্জে ওঠেন এবং মহানায়কের ভূমিকা পালন করেন শেখ মুজিবুর রহমান।তিনি বলেন, ১৯৫৩ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরিতে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি জানান বঙ্গবন্ধু। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৭ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তিনি বলেন, বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি। এর পেছনেও বিশেষ অবদান রয়েছে বঙ্গবন্ধুর।
স্মারক ডাকটিকেট, উদ্বোধনী খাম ও ডাটাকার্ড রোববার থেকে ঢাকা জিপিও’র ফিলাটেলিক ব্যুরো এবং পরে দেশের অন্যান্য জিপিও এবং প্রধান ডাকঘর থেকে সংগ্রহ করা যাবে।