বিডিআর হত্যাকাণ্ডের দিন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ভোরে উঠে তার ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে বেরিয়ে যান বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেছেন, যিনি দুপুর ১২টার আগে ঘুম থেকে উঠেন না, তিনি কেনো সেদিন ভোরে উঠে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে চলে গেলেন? তারেক রহমানের সাথে ৩০ থেকে ৪০ বার কথা বলেন?
হাছান মাহমুদ বলেন- এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দরকার।
ই রহস্যগুলো উন্মোচন হওয়া প্রয়োজন। তাহলেই মুখোশ উম্মেচিত হবে কারা বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পেছনে কলকাঠি নেড়েছিল।
শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরের দেওয়ানজি পুকুর পাড় এলাকায় তথ্যমন্ত্রীর বাসভবনে সমসাময়িক বিষয়ে ব্রিফিংকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ নানা ধরনের প্রশ্ন উপস্থাপন করেছেন। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে আরও কারা কারা আছে সেগুলো নিয়ে তারা ক্ষমতায় গেলে তদন্ত করবেন জানিয়েছেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আসলে এটি আমাদেরও প্রশ্ন, যিনি ঘুম থেকে দুপুর ১২টার আগে উঠেন না, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের দিন খুব সকালে ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে তিনি বের হয়ে গেলেন কেন? সেদিন তিনি তারেক রহমানের সাথে ৩০ থেকে ৪০ বার ফোনে কথা বলেছেন। এটার পেছনে রহস্যটা কি?
তিনি বলেন, তখন সদ্য সরকার গঠন করেছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমাদের সরকারের তখনও দুইমাস পূর্তি হয়নি। দেড় মাসের মাথায় এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ড সংঘটনের পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল সরকারকে অস্থিতিশীল করা।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার ইতিমধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের ইতিহাসে নয় শুধু, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নিরিখেও এতবড় একটি হত্যাকাণ্ডে এতগুলো আসামির বিচার কম হয়েছে। আমাদের দেশের ইতিহাসে এতজন আসামির বিচার আর হয়নি। বিশ্ব পেক্ষাপটেও এতগুলো আসামির বিচার কোথাও হয়েছে বলে আমার জানা নেই।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের মামলার বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচন নিয়ে মামলা যে কেউ করতে পারে। মামলা করার অধিকার সবারই আছ। তবে বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে বিএনপিকে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ডা. শাহাদাতকে আমি অনুরোধ জানাবো তার দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রশ্ন রাখার জন্য। তার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সুস্থ সবল থাকা সত্ত্বেও তিনি সহ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতারা কেউ চট্টগ্রামে আসলেন না কেন। এমনকি চট্টগ্রামে যে সমস্ত কেন্দ্রীয় নেতা আছেন তারাও কিন্তু নির্বাচনের সময় তার পক্ষে নামেননি।
আমির খসরু মাহমুদকে দুয়েকবার দেখা গেলেও তা প্রেস কনফারেন্সের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তার দলের স্থানীয় নেতারা প্রথমে কিছুটা সরব থাকলেও পরবর্তীতে তারা ঘরের মধ্যে চলে যান। এজন্য ডা. শাহাদাতকে বলবো- এই প্রশ্নগুলো তার দলের নেতাদের কাছে করে তাদের বিরুদ্ধেও যাতে একটা মামলা করেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হচ্ছে বাংলাদেশের সব মানুষকে ডিজিটাল নিরাপত্তা দেয়ার জন্য। ডিজিটাল বিষয়টা আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে ছিল না, সুতরাং ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়টিও ছিল না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনলাইনে যখন একজন সাংবাদিকের চরিত্র হনন করা হয়, একজন গৃহিনীকে যখন অপবাদ দেয়া হয়, একজন সাধারণ মানুষ যখন ডিজিটাল আক্রমণের শিকার হন, তিনি কোন আইনে প্রতিকার পাবেন, কোন আইনের বলে তিনি নিরাপত্তা পাবেন, সেজন্য একটা আইনের দরকার। এই জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।
মুশতাক আহমেদের মৃত্যু অনভিপ্রেত জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমিও তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছি। সেখানে কারা কর্তৃপক্ষের কোন গাফেলতি ছিল কিনা সেটা খুঁজে দেখা যেতে পারে। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার যাতে না হয় সেজন্য আমরা সচেতন আছি, বিশেষত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যাতে এই আইনের অপব্যবহার না হয়, সেজন্য তথ্য মন্ত্রণালয় ও আমি ব্যক্তিগতভাবে সবসময় সচেতন আছি এবং এ ধরণের ঘটনা ঘটলে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়।