ভালোবাসার গল্প কি সবসময় সহজ হয়? নাকি কখনো কখনো তা নিয়ন্ত্রণের বেড়াজালে আটকে যায়? বাবা-মায়ের স্বপ্ন আর সন্তানের আকাঙ্ক্ষার মাঝে যখন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তখন কী হয়? এই সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে তৈরি হয়েছে ললিউডে পাকিস্তানি ধারাবাহিক ‘পারওয়ারিশ’। এটি শুধু একটি পারিবারিক গল্প নয়, এটি প্রতিটি পরিবারের ভেতরের অব্যক্ত কথা, প্রজন্মের ব্যবধান, এবং নিজেদের মনের কথা বলার সাহসের এক প্রতিচ্ছবি।
নাটকটি তার গল্পে এমন কিছু মুহূর্ত তুলে ধরে, যা আমরা সবাই নিজেদের জীবনে অনুভব করেছি। পারিবারিক প্রত্যাশার চাপ, নিজেদের পরিচয় খুঁজে পাওয়ার সংগ্রাম, আর ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে গিয়ে আধুনিকতার সাথে বোঝাপড়ার চেষ্টা—সবকিছুই খুব বাস্তবসম্মতভাবে উঠে এসেছে এখানে।
ওয়ালী জাহাঙ্গীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রতিভাবান অভিনেতা সামার জাফরি। একজন মেধাবী এবং সংবেদনশীল তরুণ, যে কিনা সংগীতে নিজের জীবন গড়তে চায়। কিন্তু তার বাবা চান অন্য কিছু। আমেরিকা থেকে পাকিস্তানে ফিরে আসার পর ওয়ালী পড়ে যায় নিজের স্বপ্ন এবং পারিবারিক ঐতিহ্যের মাঝে।
অন্যদিকে, মায়া চরিত্রে আছেন আইনা আসিফ। তিনি একজন আত্মবিশ্বাসী, প্রখর বুদ্ধিমতী তরুণী, যিনি ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এটি তার নিজের স্বপ্ন, কারো চাপিয়ে দেওয়া নয়। সমাজের প্রচলিত ধারণার তোয়াক্কা না করে মায়া নিজের মনের কথা বলতে ভয় পান না।
ওয়ালী আর মায়া, সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি পৃথিবীর বাসিন্দা। কিন্তু ভাগ্যের এক অদ্ভুত খেলায় তারা কাছাকাছি আসে এবং তাদের জীবন নতুন মোড় নেয়।
পরিবারের প্রধান, জাহাঙ্গীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন পাকিস্তানের কিংবদন্তী অভিনেতা নাঈমুল ইসলাম। তিনি একজন বাবা, যিনি একদিকে পরিবারকে ভালোবাসেন, অন্যদিকে তার বেড়ে ওঠার মূল্যবোধগুলোর প্রতিও তার গভীর আনুগত্য রয়েছে। হঠাৎ করে তার পরিবারকে আমেরিকা থেকে পাকিস্তানে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত পুরো পরিবারের জীবনে ঝড় তোলে।
অন্যদিকে, মাহনূর চরিত্রে আছেন সারা নাদিম। একজন স্ত্রী ও মা হিসেবে তিনি নীরবে পরিবারে শান্তি বজায় রাখার জন্য লড়াই করেন, যেখানে সবসময়ই আবেগ ও উত্তেজনার ঢেউ ওঠে।
এদের সাথে আরও আছেন দাদা (আরশাদ মাহমুদ), দাদি (শামিম হিলালি), এবং মায়ার বাবা-মা (নজরুল হাসান ও বখতাওয়ার মজহার)। এই শক্তিশালী পার্শ্বচরিত্রগুলো গল্পটিকে আরও বাস্তব এবং জীবন্ত করে তোলে।
কিসমত সিদ্দিকীর চিত্রনাট্য এবং মাইসানের পরিচালনায় ‘পারওয়ারিশ’ দর্শকদের এক ভিন্ন স্বাদ দেবে। যদি আপনি কখনো আপনার বাবা-মায়ের সাথে ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বন্দ্বে পড়ে থাকেন, অথবা আপনি যদি একজন অভিভাবক হিসেবে আপনার সন্তানকে সঠিক পথে চালিত করার চেষ্টা করছেন, তাহলে এই নাটকটি আপনার জন্যই।
এটি কেবল একটি নাটক নয়, এটি ভালোবাসার এক স্মরণীয় বার্তা যা মনে করিয়ে দেয় যে পরিবারে মতের অমিল হলেও ভালোবাসা দিয়ে সবকিছুকে এক সুতোয় গেঁথে রাখা যায়।