আনতারা রাইসা : যদি জিজ্ঞেস করা হয় বলিউডের সবচেয়ে প্রিয় অভিনেতা কে তাহলে আপনার উত্তর কি হবে ? আমরা যারা আশি বা নব্বই শতকে বড় হয়েছি তাদের বেশিরভাগ ই হয়ত উত্তর দিবেন অমিতাভ বচ্চন। এই তো কিছুদিন আগেই সত্তরের দশকের পর্দা কাঁপানো সুপারস্টার এর জন্ম বার্ষিকী গেল। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ গোটা বিশ্ব। এখনো অভিনয় করে যাচ্ছেন একের পর এক চলচ্চিত্রে। ছবির মূল চরিত্র হয়ে পাল্লা দিচ্ছেন শাহরুখ-আমির-সালমান খানদের মতো সুপারস্টারদের সাথে।এজন্যই তিনি বলিউডের অঘোষিত শাসক, শাহেনশাহ। প্রায় ৫০ বছর ধরে তিনি বলিউড দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমাদের দিয়েছেন একের পর এক সুপারহিট সিনেমা। ক্যারিয়ার এর শেষের দিকে এসেও তিনি বিভিন্ন নিরীক্ষামূলক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। যেমন, পিকু, চিনি কম, পিঙ্ক । সেখানেও পেয়েছেন সাফল্য। তার এত এত ছবির মধ্যে সেরা ৫ ছবি বের করা খুবই কঠিন। তবুও আমি চেষ্টা করেছি তার সেরা ছবি গুলো বের করতে। আপনারাও জানান আপনাদের দেখা তার সেরা ছবি গুলো সম্পর্কে ।
১। শোলে
১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটিকে ভারতের অন্যতম সেরা এবং ক্ল্যাসিক বলে ধরা হয়। এই সিনেমাটি ২০০২ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিউট পোল এ ‘ভারতের সেরা দশ’ চলচ্চিত্রের তালিকায় ছিল। রমেশ সিপ্পি দ্বারা পরিচালিত এই সিনেমাটি মূলত ২ সন্ত্রাসীকে নিয়ে। ছবিতে দেখা যায় জয় (অমিতাভ বচ্চন) এবং ভিরু( ধর্মেন্দ্র) কে এক অবসর প্রাপ্ত পুলিশ অফিসার দায়িত্ব দেয় দুর্ধষ ডাকাত গাব্বার সিং কে ধরে আনার। এই সিনেমাটি সবার পছন্দের তালিকায় সবসময় এক নাম্বারে থাকবে মূলত এর কিছু সংলাপ , দৃশ্যায়ন , চরিত্র গুলির জন্য। বিশেষ করে এই সংলাপ টি “বাসন্তি ইন কুত্তকে সামনে মাত নাচনা” । এই সিনেমার একটি সূর্যাস্তের সময়ের শুটিং করতে এর পরিচালক সময় নিয়েছিলেন ৩ বছর কারণ তিনি কোনভাবেই সেই নিখুঁত সময় এবং লাইটিং পাচ্ছিলেন না।
২। দিওয়ার
এই ছবিটিও ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া। যখন ভারতে একটা অস্থিতিশীল রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা বিরাজমান তখন এ ছবিটি মুক্তি পায়। এই ছবিতে অমিতাভ তার রোমান্টিক হিরোর তকমা থেকে বেরিয়ে প্রথমবারের মত ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করেন। তার যে “ এংরি ইয়ং ম্যান” উপাধি আছে এই ছবিতে সেটি তিনি সবচেয়ে চমৎকার ভাবে প্রমাণ করেন। এর পরিচালক ইয়াশ চোপড়ার এটি অন্যতম প্রধান নন রোমান্টিক ছবি। এই ছবিতে দেখা যায় দুই ভাইকে যারা তাদের চরিত্রে এবং পেশায় সম্পূর্ণ আলাদা মানুষ। রবি ( শশী কাপুর) একজন ন্যায় পরায়ণ পুলিশ অফিসার অন্যদিকে তার ভাই (অমিতাভ বচ্চন) সম্পদ ও ক্ষমতার লোভে একজন চোরা-চালান কারি। দুই ভাইয়ের মধ্যে এই যে নৈতিকতার দ্বন্দ্ব এটি এই ছবিতে ফুটে উঠেছে। এই ছবিতে অমিতাভের অসাধারণ অভিনয় নজর না কেড়ে উপায় নেই। “মেরে পাস মা হে” এটা এই ছবিরই সেই বিখ্যাত সংলাপ। দিওয়ার এবং শোলে একই সময়ে শুটিং হওয়াতে অমিতাভ সকালে শোলে এবং রাতে দিওয়ার এর শুটিং করতেন এবং কখনই স্পটে দেরি করে আসতেন না।
৩। ডন
১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটিতে অমিতাভকে দুইটি চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়। এটি একটি ক্রাইম ধাঁচের ছবি। এই ছবিতে অমিতাভ বিজয় যে বস্তিতে থাকে সেই যুবকের চরিত্রে অভিনয় করেন । এছাড়াও ডন যে একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসি সেই চরিত্রেও অভিনয় করেন। কাহিনী আবর্তিত হয় বিজয়কে নিয়ে যে ডন এর মত দেখতে । এই ছবিটি ভারতের অন্যতম ব্যবসা সফল ছবি যেটি ইন্ডিয়ান বক্স অফিস দ্বারা গোল্ডেন জুবলি হিট খেতাব পেয়েছে। পরবর্তীতে আমরা দেখতে পাই বলিউডের আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা শাহরুখ খান এর রিমেক ডন এবং ডন ২ তে অভিনয় করেছেন সেগুলো ব্যবসা সফল। অন্যতম এই ব্যবসাসফল ছবিটির স্ক্রিপ্ট প্রথমে সব পরিচালক ও প্রযোজক দের কাছে রিজেক্টেড হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রযোজক নরিমান ইরানি এটা ছবি বানাতে রাজি হন।
৪। অগ্নিপথ
১৯৯০ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি অমিতাভ বচ্চনের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ছবি । এই ছবিতে বিজয় চৌহান (অমিতাভ বচ্চন) নামের এক যুবক কে তার পিতা হত্যার প্রতিশোধ নিতে দেখা যায় । এই ছবির জন্য অমিতাভ তার ক্যারিয়ারের প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান সেরা অভিনেতা হিসেবে। এই ছবি বিখ্যাত তার অসাধারণ সংলাপ এবং মিঠুন চক্রবর্তী র অভিনয়ের জন্য। যদিও এই ছবিটি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল তবুও এটি বক্স অফিসে ফ্লপ কারণ এটি তার বাজেটের সমান ব্যবসা করতে পারেনি।
৫। ব্ল্যাক
অমিতাভ বচ্চন কখনই তার চরিত্র নিয়ে পরীক্ষা করতে ভয় পেতেন না। এজন্যই তাকে সবসময় নানা ধরণের চরিত্রে দেখা গিয়েছে। এর একটি অন্যতম উদাহরণ ব্ল্যাক ছবিটি যেটাতে তিনি অভিনয় করেছেন এক আলঝেইমার এ আক্রান্ত শিক্ষক হিসেবে। এই ছবিটি সঞ্জয় লীলা বানসালি, রানি মুখার্জি এবং অমিতাভ বচ্চন এর পরিচালিত। মুক্তি পায় ২০০৫ সালে। এই ছবিতে এক বোবা-অন্ধ মেয়ের তার আলঝেইমার এ আক্রান্ত শিক্ষকের সাথে সম্পর্ক দেখানো হয়। এই ছবিটির জন্য অমিতাভ বচ্চন তার দ্বিতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেন সেরা অভিনেতা হিসেবে। এই ছবিটি ১৯৬২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মিরাকল ওয়ার্কার’ ছবি থেকে অনুপ্রাণিত এবং এখানে হেলেন কেলার এর জীবন দেখানো হয় । শুধু ভারতে নয় এই ছবিটি ভারতের বাইরেও বিভিন্ন দেশে বিপুল সফলতা লাভ করে। এই ছবিটি একমাত্র ছবি যেটি সবচেয়ে বেশি ১১ টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পায় । এই ছবির প্রথমে ব্যবহৃত বরফ পরার দৃশ্যটি আসলে কৃত্রিম ভাবে বানানো।
অনলাইন ডেস্ক/বিজয় টিভি