আনতারা রাইসা :করোনাভাইরাসের কারণে বাড়ি থেকে বের হওয়া নিষেধ। নিশ্বের অনেক দেশের মত আমাদের দেশ একই অবস্থা। এক কথায় বলা যায় আংশিক লকডাউন। এ অবস্থায় বাসায় থাকতে থাকতে সবারই অবস্থা বেগতিক।
ঘরবন্দি, বিষয়টিতে অভ্যস্ত নয় দেশের মানুষ। এদিকে মরণব্যাধী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এটাই এখন একমাত্র করণীয়। যেহেতু ঘরে বসেই কাটাতে হচ্ছে পুরো সময়, তাই কাজের বাইরে ঘরে থাকার এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে পারেন দেশ বিদেশের সিনেমা, নাটক কিংবা ওয়েব সিরিজ দেখে। পড়তে পারেন প্রিয় লেখকের বইও। এতে মন যেমন প্রফুল্ল হবে, তেমনি সময়ও কেটে যাবে আনন্দে।
আজ আপনাদের এমন পাঁচটি সিনেমার কথা বলব। এর মধ্যে কিছু ভিন্ন স্বাদের বলিউডি সিনেমা ও আপনারা পাবেন আবার কিছু অনুপ্রেরনাধর্মি সিনেমাও রয়েছে।
১। শশাঙ্ক রেডেম্পশন (১৯৮৪)
এই ছবিটির কথা তো আপনারা সবাই শুনেছেন। জেলখানায় বন্দির গল্প এটি। আমাদের এখন কার সময়ের সাথে খুব মিলে যায়। ছবিটি আড়াই ঘণ্টা হলেও আপনার একবারও একঘেয়ে লাগবেনা। মূলত জেলখানা থেকে মুক্তিই সিনেমার মূল বক্তব্য নয়। এখানে বলা হচ্ছে জীবন থেকে বাঁচো। জীবনকে তার চাহিদার পথে উন্নীত করো। আশায় বাঁচো। আশা এই ছবির একটি অন্যতম মূল বক্তব্য। জীবনে যা কিছুই ঘটে যাক কখনও আশা ছেড়ে দিও না। নিস্তেজ আশাটুকুকে বাঁচিয়ে রাখো। হাল ছেড়ে দিও না। এখানে আরো তুলে ধরা হয়েছে জেলখানার পরিবেশে বেড়ে ওঠা কয়েদিদের জীবনের গল্প। গল্প আবর্তিত হয়েছে ব্যঙ্কার এন্ড্রি ডুফারসনের ১৯ বছরের কয়েদি জীবন নিয়ে। তবে এই ছবিতে প্রতিটি চরিত্রেরই রয়েছে এক আলাদা জগত, আলাদা গল্প। তবে ছবিটিকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে অভিনেতা মর্গান ফ্রিম্যান । তার অনুপ্রেরনামুলক কথাগুলির জন্য ছবিটি যেন প্রাণ পেয়েছে।
২।আ ওয়েডনেস ডে
কথায় আছে, ‘মঙ্গলে উষা বুধে পা, যথা ইচ্ছা তথা যা’। মোদ্দা কথা, বুধবার শুভ দিন, কিন্তু এই ছবি দেখলে আপনার সেই ধারণা বদলে যাবে রাতারাতি। এই ছবি আপনার অ্যাড্রিনালিন রাশ বাড়াতে বাধ্য। মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন নাসিরুদ্দিন শাহ। নিজের অভিনয় ক্ষমতার প্রায় পুরোটা ঢেলে দিয়েছেন তিনি এই ছবিতে। এই লকডাউনে দুপুরে ভাতঘুমের পর পরিবারের সঙ্গে দেখে নিতেই পারেন এই ছবি।
৩। ফরেস্ট গাম্প
রবার্ট জেমেকিসের পরিচালনায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন হলিউডের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস। সেরা অভিনেতা সহ সর্বমোট ১৪টি বিভাগে মনোনয়ন পেয়ে ৬টি বিভাগে অস্কার জেতে ‘ফরেস্ট গাম্প’।
১৯৮১ সালের ঘটনা, বোকাসোকা ফরেস্ট গাম্প বাস স্টেশনে বসে একের পর এক তার জীবনের সব কাহিনী বলে যেতে থাকে। ঘটনাক্রমে ইউএস আর্মিতে যোগদান করা, এক সহযোদ্ধার জীবন বাঁচানো (যে আদৌ সেই পঙ্গুত্বের জীবন নিয়ে বাঁচতে চায়নি), রাগবী তারকা হয়ে ওঠা, বন্ধুর কথায় চিংড়ি মাছের ব্যবসা শুরু করা, ভালোবাসার মানুষ জেনির সাথে হিপ্পিদের মতো জীবনযাপন করা, ফলের ব্যবসা ভেবে অ্যাপল কোম্পানিতে টাকা বিনিয়োগ করা, ছোটবেলায় এলভিস প্রিসলিকে নাচ শেখানো, জন এফ কেনেডির সামনে না বুঝেই নিজেকে হাসির পাত্রে পরিণত করা- কী না করেছে সে জীবনে! এক ঝুড়ি অর্জন নিয়েও দিনশেষে ফরেস্ট গাম্প সেই সাধারণ গাম্পই থেকে যায়, যে কিনা ব্যবসা থেকে অর্জিত লাভের অর্ধেক তার মৃত বন্ধুর পরিবারকে পাঠিয়ে দিতে একদম ভুল করে না, বান্ধবী জেনির শত উপেক্ষাও যার ভালোবাসা এক ফোঁটা কমাতে পারে না।
৪।ওয়াটার
ওয়াটার আন্ডাররেটেড বলিউড ছবিগুলির মধ্যে একটি। জন আব্রাহামকে এমন চরিত্রে আপনি আগে দেখেননি। এই ছবিটিও আপনি ইউটিউবে পেয়ে যাবেন। দেখে ফেলতে পারবেন নিখরচায়। তাহলে আর কী? আজ থেকেই দেখা শুরু করুন এই অফবিট ছবিগুলি।
৫।ডেড পোয়েট সোসাইটি
জীবনানন্দ বলেছিলেন ‘যে জীবন দোয়েলের ফড়িঙের, মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা’।
বাংলাদেশের মত সীমিত সুযোগের দেশে সদ্য স্কুল-কলেজ পেরোনো ছেলেমেয়েগুলোর জন্য সম্ভবত এটা খুব নির্মম একটা সত্য হয়ে দাঁড়ায়। পরিবারের চাপিয়ে চেয়া চাহিদা আর সমাজের চাপে অনেকেরই হয়তো আর জীবনের স্বাদ নেয়া হয়না । ডেড পোয়েটস সোসাইটি আমাদেরকে সেরকম একটি আখ্যানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
ডেড পোয়েট সোসাইটির মুক্তিকাল ১৯৮৯ সাল। প্রায় ২০ বছর আগের ছবি হয়েও এখনও এটি মানুষের মনে গেঁথে আছে। এই ডেড পোয়েটস সোসাইটি মুভিটি একটা স্কুল, তার ছাত্র আর একজন ভিন্নধর্মী শিক্ষককে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় স্বপ্ন আর বাস্তবতার টানাপোড়েনের ভেতর দিয়ে। তবে সাহিত্য বিশেষত কবিতার মধ্য দিয়ে যে দর্শনের সাথে এইখানে আমরা পরিচিত হই তার স্বাদটা অনন্য। শিক্ষামূলক ও প্রেরণাদায়ক এই ড্রামা/কমেডি ১৯৯০ সালের ৬২তম একাডেমি পুরস্কারের আসরে জিতে নেয় মৌলিক চিত্রনাট্যের জন্য অস্কার।