ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অবৈধ দখলদারিত্ব চলছে দশকের পর দশক ধরে। কোনোভাবেই ইসরায়েল তার অবস্থান থেকে সরতে রাজি নয়। এমন অবস্থায় আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে ইসরায়েলি দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছে তুরস্ক ও আরব রাষ্ট্রগুলো।
একইসঙ্গে এই দখলদারিত্বকে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রধান বাধা বলেও আখ্যায়িত করেছে তুরস্ক। সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরব রাষ্ট্রগুলো সোমবার আন্তর্জাতিক বিচারকদের কাছে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছে। একইসঙ্গে শুনানির শেষ দিনে এটিকে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রধান বাধা বলেও আখ্যায়িত করে তুরস্ক।
ইসরায়েলি দখলদারিত্বের আইনি বৈধতা সম্পর্কে ২০২২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অনুরোধের পরে ৫০ টিরও বেশি দেশের যুক্তি-তর্ক শুনেছে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)। সোমবার ছিল হেগের এ আদালতে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের কয়েক দশকের দখলদারিত্ব নিয়ে শুনানির ষষ্ঠ ও শেষ দিন।
শুনানির শেষ দিনে তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেত ইলদিজ বিচারকদের বলেন, ইসরায়েলি দখলদারিত্ব এই অঞ্চলে সংঘাতের মূল কারণ। এছাড়া গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা এবং এর জেরে প্রায় পাঁচ মাস ধরে নিরলস ইসরায়েলি আগ্রাসন ও ২৯ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানি নিয়ে বক্তব্য রাখেন ইলদিজ।
তিনি বলেন, ৭ অক্টোবরের পর উদ্ভূত পরিস্থিতি আবারও প্রমাণ করে, ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাতের মূল সমস্যাকে সমাধান না করে, এই অঞ্চলে শান্তি থাকতে পারে না। তিনি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে রাখাকে ‘শান্তির পথে প্রকৃত বাধা’ বলে বর্ণনা করেন।
একইসঙ্গে এটিকে অবৈধ ঘোষণা করার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারকদের প্রতি আহ্বানও জানান তুরস্কের এই উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ইসরায়েল অবশ্য এই শুনানিতে অংশ নেয়নি। দেশটির দাবি, আদালতের সম্পৃক্ততা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি অর্জনের চেষ্টার জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। এছাড়া আদালতের কাছে উত্থাপিত প্রশ্নগুলোকে ‘পক্ষপাতমূলক’ বলেও অভিহিত করেছে ইসরায়েল।
আরব লীগের সেক্রেটারি জেনারেল আহমেদ আবুল গীত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের এই দখলদারিত্বকে ‘আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের অবমাননা’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
রয়টার্স বলছে, শুনানির সময় আন্তর্জাতিক আদালতে বক্তব্য রাখা বেশিরভাগ দেশই বিচারকদের কাছে ইসরায়েলের এই দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করতে আহ্বান জানায়। তবে সোমবার ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র ফিজিসহ মুষ্টিমেয় কয়েকটি দেশ যুক্তি দিয়ে বলেছে, আইসিজেকে কোনও পরামর্শমূলক মতামত দিতে অস্বীকার করা উচিত।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে আদালতকে দখলদারিত্বের বিষয়ে কোনও পরামর্শমূলক মতামত সীমিত রাখার এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলি বাহিনীকে নিঃশর্ত প্রত্যাহারের আদেশ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
গত শুক্রবার বাইডেন প্রশাসন বলেছে, দখলকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনের বিষয়ে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।
সোমবার আইসিজের শুনানি শেষ হয়ে গেছে এবং যথাসময়ে সিদ্ধান্তের তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে আদালত বলেছে। তবে ১৫ জন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত এই প্যানেলটি দখলদারিত্বের বিষয়ে তাদের মতামত জারি করতে প্রায় ছয় মাস সময় নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।