প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা পথ তৈরি করে দিয়ে গেলাম। পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
শুক্রবার (২৮ জুলাই) গণভবনে এসএসসি ও সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সরকার লক্ষ্য অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করতে পেরেছে বলে তিনি জানান।
এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ছেলের তুলনায় মেয়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলেদের সংখ্যা কেন কমে গেলো— এ বিষয়টি আমাদের ভেবে দেখা দরকার। এরা কী স্কুলে যাচ্ছে না? পড়ছে না? আমার মনে হয়— এ বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভালো করে দেখার দরকার।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সারা বিশ্বের সকল জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। তারপরেও আমরা শিক্ষা খাতে কোনও কার্পণ্য করিনি। সেখানে শিক্ষা উপকরণ, বিনামূল্যে বই বিতরণ— যা যা প্রয়োজন আমরা দিতে পেরেছি।
পরীক্ষার ফলাফল সম্পূর্ণ ডিজিটালভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সঠিকভাবে ফল প্রকাশ করা হচ্ছে। এখানে আর কোনও কিছুর ব্যত্যয় ঘটে না। পরীক্ষার্থীদের ফলাফলের জন্য আর স্কুলে যেতে হবে না। ঘরে বসেই তারা ফলাফল পেয়ে যাবে।
পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হবে তাদের আগাম অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, পরীক্ষায় যারা কৃতকার্য হতে পারোনি তাদেরকে আমি বলবো— হতাশ হওয়ার কিছু নেই, হতাশা মানুষের আরও বেশি ক্ষতি করে। বরং আগামীতে যাতে আরও ভালোভাবে পাস করতে পারো, সেভাবে প্রস্তুত হবে— আমি সেটা আশা করি। অভিভাবকদের বলবো— ছেলেমেয়েদের প্রতি নজর দেবেন। তাদের পড়াশোনার প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি দিবেন। ছেলেমেয়েরা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে কী করছে— সেদিকে নজর দেওয়ার জন্য আমি অভিভাবকদের অনুরোধ জানাবো।
ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে প্রি-ভোকেশনাল শিক্ষা চালু করা হয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ভোকেশনাল ট্রেনিংটা ছোটবেলা থেকে শুরু হলে তারা আরও ভালো কাজ করতে পারবে। তাদের নিজেদের যে চিন্তা-ভাবনাটা রয়েছে। নিজেদের যে উদ্ভাবনী শক্তি আছে সেটা বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে। তাছাড়া প্রাইমারি প্রি-প্রাইমারি শ্রেণিতেও ছোট ছোট বাচ্চাদের হাতের কাজ ও খেলাধুলার মধ্য দিয়ে শিখানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কারিগরিতে শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি দিন দিন বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথমে আমি হতাশ ছিলাম। এই কারিগরি ও বিজ্ঞান শিক্ষায় অনেকে আগ্রহী ছিল না। আমরা মাদ্রাসা শিক্ষাকে স্বীকৃতি দিয়েছি। সেখানে শিক্ষাটা যাতে মানসম্মত হয় সেই ব্যবস্থা নিয়েছি।
আমাদের সব থেকে বেশি দরকার এখন শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করা। সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা যাতে চলতে পারে সেই ব্যবস্থা নেওয়ার। আমাদের ছেলেমেয়েরা কিন্তু যথেষ্ট মেধাবী। বাঙালি ছেলেমেয়েরা পৃথিবীর যে বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করে সেখানে অভূতপূর্ব ফলাফল দিতে পারে।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য রেখে এখনই আমাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা-দীক্ষায়, চিন্তায়-মেধা-মননে সবকিছুতেই আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সেভাবে আমাদের কাজ করে যেতে হবে।
তিনি বলেন, অভিভাবকদের বলবো— ছেলেমেয়েরা ফেল করেছে বলে কখনোই বকাবকি করবেন না। কারণ তাদেরও মনে অনেক কষ্ট আছে। কাজেই তাদের অনেক আদর দিয়ে ভালোবাসা দিয়ে— তারা যেন পড়াশোনায় মনোনিবেশ করে আমাদের অভিভাবকরা সেই পথেই যাবেন এ প্রত্যাশা করি। অযথা অমুকের ছেলে ভালো করলো আর তুমি পারলে না কেন এই তুলনা যেন না করি। সবার সমান মেধা থাকে না। যার যতটুকু দক্ষতা আছে সেই অনুযায়ী পড়বে। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা করা দরকার। যারা অকৃতকার্য হয়েছে তাদের প্রতি আরও বেশি সহানুভূতিশীল হয়ে তারা যাতে আগামীতে পড়াশোনা মনোনিবেশ করে সেটা দেখার জন্য আমি শিক্ষক-অভিভাবকদের আহ্বান জানাচ্ছি।