একাত্তর সালের ৬ মার্চ। এদিন বঙ্গবন্ধুর ডাকে আধাবেলার হরতাল ছিল। অন্যদিকে এদিন দুপুরে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান।
ভাষণের পুরোটা জুড়েই ছিল বাঙালিদের প্রতি হুমকি-ধমকি। ছিল সামরিক বাহিনী দিয়ে বাঙালিকে শায়েস্তা করার হুমকি।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের একদিন আগে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার হুমকি-ধমকি স্বাধীনতাকামী বাঙালীকে হতাশ, ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত করে তোলে। এমনিতেই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে লাগাতার হরতাল ও অসহযোগ আন্দোলন চলছে। ইয়াহিয়ার ভাষণের পর তা নতুন মাত্রা পায়।
প্রবল আন্দোলনে দিশেহারা পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ও তাদের এদেশীয় দোসররা। বাঙালীর এই আন্দোলন কঠোরভাবে দমনে নীলনকশা করতে থাকে। বিশ্বের কাছে স্বাধীনতার এই আন্দোলন-সংগ্রামের খবর যাতে কোনভাবেই যেতে না পারে সেজন্য তৎপর হয়ে উঠে। কোনভাবেই যাতে এসব খবর না ছাপা হয় সেজন্য প্রতিটি সংবাদপত্রের অফিসে ফোন বা সশরীরে গিয়েও হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে ৬ মার্চের হরতালও সারাদেশে সর্বাত্মকভাবে পালিত হয়। গত কয়েকদিনে সেনাবাহিনীর নির্বিচার হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সর্বস্তরের মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এ ক’দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য বঙ্গবন্ধু ও বাংলার জনগণকে দায়ী করে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এদিন বেতারে ভাষণ দেন। ৫ মার্চ ইয়াহিয়া এবং ভুট্টো ৫ ঘণ্টা গোপনে বৈঠক করে যে খসড়া তৈরি করেছিলেন বক্তৃতায় সেটিই প্রতিফলিত হয়।
অন্যান্য ঘটনাবলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ভেঙে ৩৪১ জন কারাবন্দী পলায়নকালে পুলিশের গুলিতে ৭ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়।
এদিন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক শাসক লে. জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খানকে সরিয়ে তদস্থলে ‘বেলুচিস্তানের কসাই’ খ্যাত লে. জেনারেল টিক্কা খানকে উভয় পদে নিযুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এদিকে এয়ার মার্শাল আসগর খান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিস্থিতি রক্ষা করার জন্য আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। বাকি বিষয় আগামীকাল শেখ মুজিবের বক্তৃতায় জানতে পারবেন।’
আর বাঙালিদের মনে জল্পনা-কল্পনা তাদের মুক্তির দিশারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ কী ভাষণ দেবেন। ভাষণে তিনি কী বলবেন, এই নিয়েই আলোচনা চলছিল সর্বত্র।
দেশের পরিস্থিতি অনেকটা এ রকম- একদিকে স্বাধীনতা ঠেকাতে রণপ্রস্তুতিতে পাকিস্তানি সামরিক হানাদার। অন্যদিকে যে কোন আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে ঐক্যবদ্ধ বীর বাঙালী। সব মিলিয়ে অগ্নিগর্ভ সময়। কার্যত, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণে কী আসে পরবর্তী দিকনির্দেশনা, সারা দেশের মানুষ অধীর আগ্রহে তার প্রহর গুনতে থাকে।